এক বছরের জন্য দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। কিন্তু ৮ মাসেই যেন হাঁপিয়ে উঠেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। বিসিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার কাছে জানিয়েছেন, তিন ফরম্যাট থেকেই অধিনায়কত্বের দায়িত্ব ছাড়তে চান। ২৯ অক্টোবর চট্টগ্রামে শুরু হতে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে শেষবারের মতো বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিতে চান।
ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘ক্রিকবাজ’-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে নেতৃত্ব ছাড়ার ব্যাপারটি চূড়ান্ত করে ফেলেছেন শান্ত। বর্তমানে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ দেশের বাইরে অবস্থান করায় তিনি দেশে ফিরলে তাঁর সঙ্গে একটা বৈঠক হবে। শান্তর জায়গায় দলকে কে নেতৃত্ব দেবেন, তা নিয়ে প্রাথমিক একটা আলোচনা হয়েছে।
সেখানে তিন ফরম্যাটের জন্য কোনো একজনকে দায়িত্ব না দেওয়ার ব্যাপারে বেশির ভাগ বোর্ড পরিচালকের মত রয়েছে। সে ক্ষেত্রে টেস্ট ও ওয়ানডে ফরম্যাটের জন্য মেহেদী হাসান মিরাজ এবং টি২০-এর জন্য তাওহিদ হৃদয়ের নাম আসতে পারে বলে ক্রিকবাজের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের পরপরই সাকিব আল হাসানের জায়গায় নাজমুল হোসেন শান্তকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত তাঁর মেয়াদ রয়েছে। কিন্তু গত টি২০ বিশ্বকাপে দলের ও নিজের বাজে পারফরম্যান্সের পর সমালোচনা ঝড় ওঠে। তখনই নাকি শান্ত টি২০-এর নেতৃত্ব ছাড়তে চেয়েছিলেন।
কিন্তু তখন তাঁকে বুঝিয়ে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে বলা হয় বোর্ড থেকে। কিন্তু সম্প্রতি টেস্টেও তাঁর ব্যাটে প্রত্যাশিত রান নেই। পাকিস্তানে তাঁর দল সিরিজ জিতলেও ভারতে নাস্তানাবুদ হওয়া ও সম্প্রতি মিরপুর টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হার। একে তো নিজের পারফরম্যান্সের বাজে অবস্থা, তার ওপর আবার মিডিয়ার সামনে তাঁর কিছু মন্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচিত হয়।
যেখানে মিরপুর টেস্ট শুরু হওয়ার আগে তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিলেই সব কিছুর সমাধান হয়ে যায়! চিন্তা করছি, প্রতিদিন একটা করে আমিও স্ট্যাটাস দেব।’
ওই ঘটনার পর তাঁকে নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। গত বছর মাঠে দারুণ পারফর্যান্সের কারণেই নেতৃত্ব পেয়েছিলেন শান্ত। কিন্তু এ বছর তাঁর মোটেই ভালো যাচ্ছে না। যেখানে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ৩২ ইনিংস খেলে একটা মাত্র ফিফটি। টেস্টে এ বছর ১৩ ইনিংসে তাঁর ব্যাটিং গড় মাত্র ২০.৯২। রান পাওয়ার জন্য ভারত সফরে ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন করে মুমিনুলকে তিনে পাঠিয়ে নিজে নেমেছিলেন চার নম্বরে।
সেখানেও কিছু করতে পারেননি। নেতৃত্বের চাপেই যে ব্যাটিংয়ে রানের খরা, সে কথা অবশ্য সংবাদ সম্মেলনে কখনোই স্বীকার করেননি। বারবারই বলে গেছেন, একটি ভালো ইনিংস হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। তবে এবার তাঁর উপলব্ধি হয়েছে, স্বেচ্ছায় দায়িত্ব ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করা দ্বিতীয় অধিনায়ক তিনি। এর আগে ২০০৩ বিশ্বকাপের বাজে পারফরম্যান্সের পর এমনটি করেছিলেন খালেদ মাসুদ পাইলট।
তবে বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম জানিয়েছেন অতিরিক্ত চাপেই অধিনায়কত্ব করতে পারছেন না শান্ত। ‘ তার মতো একজন খেলোয়ার আমাদেরই কারনে অধিনায়কত্ব করতে পারছে না। আমাদের মতো দেশে অধিনায়ক হওয়া মানে সব সময় চাপে থাকতে হবে, তাকে নিয়ে আমরা যে পরিমান সমালোচনা করি, যেভাবে সমালোচনা করি, তার জন্য কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে। ভালো না খেলার কারনও হয়তো সেটা।’ গতকাল মিডিয়ার সামনে এভাবেই অসন্তুস্টি প্রকাশ করেন ফাহিম।
আসলে অধিনায়ক বেছে নেওয়ার ব্যাপারেও বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টকে। দলের তিন সিনিয়র ক্রিকেটারের মধ্যে মুশফিক অবসরের পথে, তাসকিন পেস বোলার। তিনি দেশে বা বিদেশে কন্ডিশনের কারণেই অনেক সময় একাদশের বাইরে থাকেন। বাকিদের মধ্যে লিটন কুমার দাস শান্তকে অধিনায়ক করার আগে নাকি নিজেই নেতৃত্বে অনাগ্রহ দেখিয়েছিলেন। তাই মেহেদী হাসান মিরাজ অন্য অনেকের চেয়ে এগিয়ে। মিরাজ আগে বিদেশের মাটিতে টেস্ট একাদশে নিয়মিত ছিলেন না।
তবে সাকিব আল হাসানের শূন্যতা তাঁকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে। তা ছাড়া সম্প্রতি ব্যাটিংয়ে তাঁর অবদান দলে একজন সলিড অলরাউন্ডারের জায়গা দিয়েছে। তাই টেস্টের নেতৃত্বের দৌড়ে এই মুহূর্তে এগিয়ে মিরাজ, ওয়ানডেতেও ঠিক তাই। তবে টি২০ ফরম্যাটে কন্ডিশন ও প্রতিপক্ষের কারণে একাদশে মিরাজের অনিশ্চয়তা রয়েছে। তাই সেখানে অধিনায়ক হিসেবে তাওহিদ হৃদয়কে এগিয়ে রাখা হচ্ছে। ৬ নভেম্বর থেকে শারজাহতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ওয়ানডের সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। ওই সিরিজে নতুন অধিনায়কের যাত্রা শুরু হতে পারে।