ওদিকে বিরাট থাকলে, এদিকেও লিটন আছেন; ফর্মে এখন কাছাকাছিই তারা! রোহিতের মতো শান্তর মেজাজও ঠান্ডা হয়ে আছে প্রত্যাশিত রান না পেয়ে; ওদিকে বুমরাহর মতো মুস্তাফিজও ‘কথা কম কাজ বেশি’ মুডে রয়েছেন। ম্যাচের হ্যাশট্যাগ দিয়ে দু’দলের সমর্থকরাও অপেক্ষা করছেন ফেসবুকের দেয়াল গরম করার। এসব কিছুই ভিন্নমাত্রা যোগ করছে পড়শি বাংলাদেশ-ভারতের আজকের ম্যাচটিতে (রাত ৮:৩০)।
তা সে র্যাঙ্কিংয়ে যতই ভারত এক নম্বরে থাকুক না কেন, ৯-এর বাংলাদেশের সঙ্গে সুপার এইটে লড়াইটা কিন্তু জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইঙ্গিতই দিচ্ছে। অন্তত গতকাল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৮ রানে হারা ম্যাচের মতো একপেশে পানসে ম্যাচ হবে না।
অ্যান্টিগায় আজ শুধু ‘হাওয়া’ বুঝে খেলতে হবে সাকিবদের ! উইকেটের আড়াআড়িভাবে এই মাঠে প্রচণ্ড বাতাস বইতে থাকে, অসি বোলার ও ব্যাটাররা যা কৌশলে মানিয়ে নিয়েছিলেন, সেটাই করতে হবে মাহমুদউল্লাহ-রিশাদদের। সেমিতে উঠতে হলে দু’দলের জন্যই ম্যাচটি জেতা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই ওঠানামার চাপটি বোধ হয় ভারতেরই বেশি।
বাংলাদেশের জন্য বরং তা কেবলই ‘বোনাস’। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তো বলেই দিয়েছেন– ‘সুপার এইটে ওঠাই ছিল আমাদের প্রধান লক্ষ্য, সুপার এইটে গিয়ে ভালো কিছু পাওয়া আমাদের কাছে বোনাসের মতোই।’ সবাইকে স্বাধীনভাবে খেলতে বলে একটা গা-ছাড়া ভাব রয়েছে এই সুপার এইটে এসে। এদিন লিটন যেভাবে ২৫ বলে ১৬ রান করলেন, তাকে নিশ্চয় ‘স্বাধীন ব্যাটিং’ বলে না, ম্যাচের পর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাখ্যা, ‘শুরুতে আমাদের একটু দেখে খেলার পরিকল্পনা ছিল।’
সেই পরিকল্পায় আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম করলেন শূন্য। পর পর দুই ম্যাচে শূন্য করেও একাদশে তাঁর জায়গা নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই। শান্ত নিজে এদিন তাঁর সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে যে ৪১টি রান করেছিলেন, সেটা প্রতিপক্ষ বোলারদের ওপর কতটা শাসন করে এসেছে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
সাকিবকে দিন দিন একাদশে লুকিয়ে রাখতে হচ্ছে অধিনায়ককে, পিচের সহায়তা না পেয়ে বোলিংয়ে প্রত্যাশিত ধার নেই আর বড় ম্যাচে তাঁর ব্যাট কথা বলে না অনেক বছর ধরেই। ব্যাটিংয়ে শুধু তাওহিদ হৃদয় আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছেন। কাউ কর্নার দিয়ে স্টয়নিসকে ছক্কা কিংবা স্লগ সুইপে জাম্পাকে বাউন্ডারিছাড়া করা– কোনো কিছুতেই সাহস কম দেখাচ্ছেন না হৃদয়। মাঠের হাওয়া মেপে ছক্কা মারতে জানেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও।
ভারতের বিপক্ষে আজ একই মাঠের ভিন্ন পিচে খেলা। অসি ম্যাচের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শান্ত অন্তত বুঝেছেন, এখানে ২০০-এর কাছাকাছি পিচে ১৫০ নস্যি! ১৮০-১৯০ রান উঠলে তবেই বোলাররা কিছু করতে পারবেন। আফগানদের বিপক্ষে বার্বাডোজে ৬২ রানে ৩ উইকেট হারানোর পরও কিন্তু সূর্যকুমারের তেজে ভারত ১৮১ রান তুলেছিল। বুমরাহ ও আর্শদীপ মিলে ৬ উইকেট শিকার করেছিলেন। একজনের ইয়র্কার আর নিখুঁত লেন্থ, অন্যজনের সুইং– দুই মিলিয়ে ভারতীয় পেস আক্রমণ বেশ শক্তিশালীই।
তবে কিনা পাকিস্তানকে বিশ্বকাপের শুরুর দিকে হারানোর পর থেকে সেভাবে আর কোনো চ্যালেঞ্জের মুখেই পড়তে হয়নি ভারতকে। কিন্তু অতীত বলছে, ২০১১ বিশ্বকাপটি বাদ দিলে আইসিসি এমনকি এশিয়া কাপের সব ম্যাচেই এই ভারতকে চাপের মুখে রাখতে পেরেছে কেবল বাংলাদেশই। গত টি২০ বিশ্বকাপেও অ্যাডিলেডে ভারত জিতেছিল মাত্র ৫ রানে। এমনিতে দু’দলের মুখোমুখিতে ১৩ ম্যাচের একটিতে মাত্র জয় বাংলাদেশের, দিল্লিতে গিয়ে সেবার জিতেছিল নাঈম শেখরা।
তবে পরিসংখ্যান কিংবা সাম্প্রতিক ফর্ম নয়, দুই প্রতিবেশীর এই ম্যাচে বাড়তি কিছু বারুদও থাকে। তা সেই মেলবোর্নই হোক কিংবা কলম্বো-দুবাই। আর এই লড়াইয়ে নামতে হলে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের মতো ‘বক ডাউন’ হয়ে থাকলে শুরুর আগেই শেষ লিখতে হবে। এখানে লিটনকে খেলতে হবে লিটনের মতোই, সাকিবকে ফিরতে হবে সেই ২০০৭ সালে এই উইন্ডিজের পোর্ট অব স্পেনে ভারতকে হারানোর সাহসিকতা নিয়ে।
এটা প্রমাণিত যে, বড় ম্যাচের পারফরমাররাই পারে বড় ধাক্কাটা দিতে। ভারতকে হারাতে পারলে সুপার এইটে পরের ম্যাচ আফগানিস্তানের সঙ্গে। কাগজে অন্তত সেমিতে যাওয়ার সম্ভাবনাটা তাহলে থাকবে। আর তা না হলে পরের ম্যাচ শুধুই সান্ত্বনার।