ইরানের দক্ষিণাঞ্চলে শহিদ রাজি বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে আশপাশের এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে এবং বন্দর আব্বাসের কিছু শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর তথ্য মিলেছে। এতে আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ। স্থানীয় সময় শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার পর বিস্ফোরণে বন্দরটি কেঁপে ওঠে। জরুরি উদ্ধারকারী দল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। খবর তেহরান টাইমস, বিবিসি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, বিস্ফোরণ এলাকা থেকে কালো ধোঁয়ার বিশাল কুণ্ডলী বের হচ্ছে। অন্যান্য ভিডিওতে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন এবং গাড়ি পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শক্তিশালী ওই বিস্ফোরণের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জরুরি দপ্তর জানিয়েছে, একটি ফুয়েল ট্যাঙ্কার বিস্ফোরণে ৫৬১ জন আহত হয়েছেন। কী কারণে ট্যাঙ্কারটি বিস্ফোরিত হয়েছে তার কারণ জানা যায়নি। আহতদের উদ্ধার করে হরমোজান হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। হরমোজান সংকট ব্যবস্থাপনা দপ্তরের প্রধান পরিচালক বলেন, বিস্ফোরণটি ব্যাপক শক্তিশালী ছিল। তবে এর কারণ এখনো অজানা।
প্রাথমিক তদন্তে বলা হয়েছে, বন্দরের একটি প্রশাসনিক ভবন থেকে বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়। বিস্ফোরণের কারণে ভবনটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং এতে আরও একাধিক গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপত্তা এবং জরুরি উদ্ধারকারী দল বন্দরের কার্যক্রম স্থগিত করেছে। আহতদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ বন্দর আব্বাসসহ স্থানীয় হাসপাতালগুলোত জরুরি অবস্থা জারি করেছে। ফারসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণ এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, কাশেম থেকেও শোনা গেছে। যা বন্দর আব্বাস থেকে ২৬ কিলোমিটার (১৬ মাইল) দূর অবস্থিত।
২০২০ সালে ইরানের এই বন্দরের কম্পিউটারগুলো একটি সাইবার হামলার শিকার হয়, যার ফলে পানিপথ ও সড়কপথে বন্দরের দিকে যাওয়ার রাস্তায় ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। ওই সময়ে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছিল, ইরানের চিরশত্রু ইসরায়েল এর পেছনে দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ ইরানের আগের একটি সাইবার হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে ওই হামলা চালানো হয়েছিল।
তবে শহিদ রাজি বন্দরে বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত থাকার প্রসঙ্গে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল সেনাবাহিনী এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর।
সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ অনুসারে, রাজধানী তেহরানের ১,০০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত শহিদ রাজাই ইরানের সবচেয়ে উন্নত কন্টেইনার বন্দর। এটি বন্দর আব্বাস থেকে ২৩ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং হরমুজ প্রণালির উত্তরে অবস্থিত। এখান দিয়ে বিশ্বের তেল উৎপাদনের এক-পঞ্চমাংশ যায়।
এদিকে, ইরনা জানিয়েছে, অনলাইনে প্রচারিত ভিডিওতে ঘটনাস্থলে ঘন ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছে। সম্ভাব্য হতাহতের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রদেশের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান বলেছেন, ‘প্রতিক্রিয়া দলগুলোকে তাৎক্ষণিকভাবে মোতায়েন করা হয়েছে। বিস্ফোরণের কারণ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি, তদন্ত চলছে। আমরা বর্তমানে আহতদের সরিয়ে নিয়ে নিকটবর্তী চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছি।’