ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেছেন, ‘আমরা রাজনীতিবিদদের মতো পুতুপুতু করার জন্য আসিনি। আমি সার্ভিস দিতে আসছি, নিতে আসছি। সার্ভিসে যে (কর্মকর্তা-কর্মচারী) উল্টাপাল্টা করবে, তার ঘুম হারাম করে দেব।
তবে মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ রাজধানীর উত্তর সিটির অধিবাসীদের কোনো আশার বাণী শোনাতে পারেননি তিনি। উল্টো নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে তিনি বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব কি পারব না আমি জানি না। এটা বলা মুশকিল। গতকাল সোমবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নগরভবনের নিজ কার্যালয়ে ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডুরা) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ডিএনসিসি প্রশাসক এ কথা বলেন। এ সময় তিনি আগামী এক বছরের তার উল্লেখযোগ্য কাজের বিবরণ তুলে ধরেন।
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘এখানে দায়িত্ব নিয়ে দেখলাম। গত ১৫ বছরে সবকিছু হয়েছে ইচ্ছামতো। কোনো চুক্তির সঠিকতা খুঁজে পাইনি। যার যেভাবে মনে হয়েছে, কাজ দিয়েছে। এমনভাবে চুরি হয়েছে ধরা মুশকিল। তবে চুক্তিগুলোতে যে গলদ ছিল, সেগুলো আমি তুলে ধরব।’
তিনি বলেন, অবিশ^াস্য হলেও সত্য, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কোনো বিভাগের কাছে কোনো তথ্য বা কম্পিউটারাইজড ডাটা নেই। এমনকি এই মুহূর্তে মশা নিয়ন্ত্রণে কতটুকু ওষুধ রয়েছে, তার তথ্যও জানা নেই। এ জন্য সেই মিরপুরে গিয়ে খোঁজ নিতে হবে। এভাবে চলতে পারে না।
তথ্য নেই, নাকি কর্মকর্তারা আপনাকে সহযোগিতা করছে নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে প্রশাসক সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করতেই হবে। না হলে আমি এখানে আসছি কেন? আমি তো চিকেনরোল খেতে আসি নাই। যারা কাজ করছে তাদের সার্ভিস রুলস আছে। আমি তাদের ফাইলের মধ্যে লেখে দেবÑ সে উল্টাপাল্টা করছে। সারাজীবনের জন্য গ্র্যাচুইটি, সবকিছু নষ্ট হয়ে যাবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব কি পারব না আমি জানি না। এটা বলা মুশকিল। মশার ওষুধ পরীক্ষা করতে দিয়েছি। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বসব।’
জলাবদ্ধতা বিষয়ে মোহাম্মদ এজাজ বলেন, কিছু কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা যাবে না। কিন্তু অধিকাংশ জায়গায় যাবে। ঢাকায় ভৌত অবকঠামো করা হয়েছে সেগুলো পরিকল্পনাবিহীন। ঢাকা সিটি পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঢালু। মাঝখানে তিমি মাছের পেটের মতো। খালগুলো সব পূর্ব-পশ্চিমমুখি। দরকার ছিল নর্দমা-জাল পূর্ব-পশ্চিমমুখী করা। জলবিদ্যা মেনে ঢাকার উন্নয়ন হয়নি। এখানে যে যার মতো উন্নয়ন করেছে।
খাল দখল ও উদ্ধার প্রসঙ্গে সিটি প্রশাসক বলেন, এখন আর খাল দখল করার সুযোগ হবে না। এ জন্য এলাকাভিত্তিক কমিটি করে দেওয়া হচ্ছে। ঈদের পর থেকে ফুটপাত ও রাস্তায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন রমজান মাস তাই উচ্ছেদ করা সম্ভব না। এখন করলে বলা হবে ঈদ-চাঁদÑ এই সময়ে কারও পেটে লাথি মারা হচ্ছে। এসব নিয়ে লেখালেখি হবে। ঈদের পর দেখবেন কী করি।’
মতবিনিময় সভায় ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ওবায়দুর মাসুম, সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মোল্লা, সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়শ্রী ভাদুড়ী, অর্থ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন (নিলয় মামুন), সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হাকিম (আবির হাকিম), সদস্য মুসা আহমেদ, জহিরুল ইসলাম, শুভ্রদেব, এখলাসুল হকসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।