লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার ঘটনা ইরানসমর্থিত সংগঠনটির জন্য বড় আঘাত। তিন দশকের বেশি সময় ধরে এ নেতা সংগঠনটিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, চলমান পরিস্থিতিতে অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় সংগঠনটির উত্তরাধিকার নির্বাচন হবে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং কাজ। তবে এ ক্ষেত্রে হাসেম সাফিদ্দিনের নাম শোনা যাচ্ছে।
গশনিবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলায় গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে নাসরুল্লাহ নিহত হন বলে নিশ্চিত করেছে হিজবুল্লাহ। বৈরুতে গবেষণা প্রতিষ্ঠান কার্নেগি মিডল ইস্ট সেন্টারের উপপরিচালক মোহানাদ হাজে আলি বলেন, পুরো প্রেক্ষাপটই পরিবর্তন হতে চলেছে। তিনি (নাসরুল্লাহ) পুরো সংগঠনটিকে একত্রিত করে রেখেছিলেন; সম্প্রসারণ ঘটিয়েছেন।
১৯৮০-এর দশকে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য হিজবুল্লাহ গঠন করেছিল। এ ছাড়া লেবাননে এটা এক সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আন্দোলন। এ আন্দোলনের মূল কেন্দ্রে ছিলেন হাসান নাসরুল্লাহ। হাজে আলি বলেন, লেবাননে তিনি (নাসরাল্লাহ) একজন কিংবদন্তি ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন। ইসরায়েল তাঁরও পূর্বসূরিকে হত্যা করেছিল। অতঃপর তিনিও সব সময় হত্যার শিকার হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে ছিলেন।
লন্ডনের গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের সহকারী ফেলো লিনা খাতিব বলেন, আপনি একজনকে মারবেন, তারা আরেকজনকে বানিয়ে নেবে। নাসরুল্লাহকে হত্যা করায় হিজবুল্লাহ শেষ হয়ে যাবে না। তবে এটা সংগঠনটির মনোবলের ওপর বড় আঘাত। পাশাপাশি এটা ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও সামরিক সক্ষমতাকেও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরে।
নাসরুল্লাহর মৃত্যুতে হিজবুল্লাহর ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়বে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ বছরের পর বছর ধরে একে অন্যের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০০৬ সালে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় লড়াই হয়। লিনা খাতিব বলেন, ইসরায়েল বিষয়টিকে নতুন পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায়। তারা চায় উত্তরাঞ্চলের নিরাপত্তা। কিন্তু এটা খুব দ্রুত হবে না। নাসরাল্লাহকে হত্যার পরও এটা সম্ভব নয়।
বৈরুতে হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলে বেশ কয়েকটি রকেট ছুড়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মাধ্যমে তারা বার্তা দিয়েছেন, হামলা অব্যাহত রাখা হবে। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ফায়াজ জর্জেস বলেন, ইসরায়েল যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এটা একটা সর্বাত্মক যুদ্ধ। ইসরায়েল হিজবুল্লাহ নেতৃত্বকে লক্ষ্য করে হামলা করছে। সেই সঙ্গে তারা তাদের অবকাঠামো ধ্বংসেরও চেষ্টা করছে। তারা হিজবুল্লাহর শক্তি নস্যাৎ করতে চাচ্ছে। সংগঠনটির সব সদস্যকে হত্যার প্রয়োজন নেই। যদি লড়াইয়ের সক্ষমতা ধ্বংস করা যায়, তখন করার কিছু থাকে না।
গবেষক ফিলিপ স্মিথ বলেন, নতুন যিনি নেতা হবেন, তাঁকে ইরান ও সংগঠনের অভ্যন্তর– উভয় জায়গায় গ্রহণযোগ্য হতে হবে। হিজবুল্লাহ সূত্রের বরাত দিয়ে তিনি জানান, এ ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার হতে পারেন হাসেম সাফিদ্দিন। তিনি নাসরুল্লাহর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। সাফিদ্দিন হিজবুল্লাহর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছেন। তিনি সংগঠনটির জিহাদ কাউন্সিলের একজন নেতা। সম্পর্কে হাসান নাসরাল্লাহর চাচাতো ভাই হন। তাঁর মতো তিনিও ইসলাম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখেন। মহানবীর (সা.) প্রতি আনুগত্য প্রকাশে মাথায় পরেন কালো পাগড়ি।