জয় দিয়ে টি২০ বিশ^কাপ শুরু করবে বাংলাদেশ- এমন ভাবনাটাও অলীক হয়ে পড়েছিল। কিন্তু দুর্দান্ত বোলিং নৈপুণ্য সেটাকেই বাস্তব করেছে। র্যাঙ্কিং, বর্তমান পরিস্থিতি অনুসারে শ্রীলঙ্কা অনেক এগিয়ে থাকলেও শ^াসরুদ্ধকর এক লড়াইয়ের পর ২ উইকেটে তাদের পরাস্ত করেছে টাইগাররা।
শনিবার বাংলাদেশ সময় অনুসারে প্রথম প্রহরেই এমন জয় পেয়েছে তারা। ২০০৭ সালে টি২০ বিশ্বকাপের প্রথম আসরে আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ আটে থাকা কোনো দলকে হারানোর স্বাদ পায় বাংলাদেশ। সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর পর নবম আসরে নেমে আবার স্বাদটা ফিরে পেয়েছে টাইগাররা।
সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল এই জয়। তবে সবাইকে ছাপিয়ে জয়ের নায়ক হয়েছেন লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন। যে কোনো ফরম্যাটে বিশ^কাপ মঞ্চে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই রিশাদ ভয়ানক ঘূর্ণিতে ৩ উইকেট নিয়ে ধসিয়ে দিয়েছেন লঙ্কান মিডলঅর্ডার। ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে প্রথমবার হয়েছেন টি২০তে ম্যাচসেরা। আর শুরুতেই লঙ্কানদের কাঁপিয়ে দিয়েছে ডানহাতি তাসকিন আহমেদের গতি ও বাঁহাতি মুস্তাফিজুর রহমানের স্লোয়ার। দুজনই দলকে আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন বেশ ভালোভাবে।
বিশ^কাপে নামার আগে মাত্র ১৭ টি২০ খেলেছেন রিশাদ। ক্রমান্বয়ে উন্নতি করছিলেন। বাংলাদেশের টি২০ ফরম্যাটে লেগস্পিনার থাকাটাই বিরল। রিশাদ সেই রীতি ভেঙে নিয়মিত খেলছেন। দেশের প্রথম জেনুইন লেগস্পিনার হিসেবে বিশ^কাপ মঞ্চে নেমেছেন এবার বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচেই। অবশ্য ওপেনার কুশল মেন্ডিসকে বোল্ড করে শ্রীলঙ্কাকে প্রথম ধাক্কাটা দেন তাসকিন।
পরপর দুটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে পরবর্তী বলেই ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হন কুশল। সাইড স্ট্রেইনের ইনজুরি নিয়েই বিশ^কাপ স্কোয়াডে ঠাঁই পান তাসকিন। প্রথম ম্যাচ খেলার শঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে নেমেই প্রথম সাফল্য তিনিই এনে দেন। তবে উইকেট নিলেও প্রথম ওভারে ১২ রান খরচা করেন তিনি ৩ বাউন্ডারি হজম করে।
অবিশ্বাস্য তাসকিন এরপর বাকি ৩ ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়েছেন এবং তাকে আর বাউন্ডারি মারতে পারেননি কোনো ব্যাটার। সপ্তম ওভারে ৪, ১২তম ওভারে ৬ ও ১৮তম ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে দাসুন শানাকার উইকেট তুলে নেন তাসকিন। স্পেল শেষ করে ১২ ডটে ৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে। তার সঙ্গে মুস্তাফিজও দুর্দান্ত বোলিং করেন। ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন মুস্তাফিজ।
ডট বল করেছেন ১৪টি। ষষ্ঠ ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই কামিন্দু মেন্ডিসকে (৪) সাজঘরে ফেরান স্লোয়ারে। ওই ওভারে ৫ রান দিলেও পরে নবম ওভারে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ২৮ বলে ৪৭ করা নিশঙ্কাকে সাজঘরে ফিরিয়ে স্বস্তি এনে দেন বাংলাদেশের তাঁবুতে।
এরপরই ধস নামে লঙ্কান ব্যাটিং অর্ডারে।
ওভারটিতে ৬ রান দেন মুস্তাফিজ। ১৪তম ওভারে ৪ রান এবং ১৯তম ওভারে মাত্র ২ রান দিয়ে মাহিশ থিকশানার উইকেট তুলে নেন তিনি। নিশঙ্কাকে ফিজ শিকার করার পরই রিশাদের ঘূর্ণি আঘাত শুরু হয়। ভালো টার্ন আদায় করতে পারছিলেন রিশাদ। চলতি আসরে স্পিনারদের মধ্যে তারই টার্ন সবচেয়ে বেশি (৩.৬ ডিগ্রি)। অষ্টম ওভারে বোলিংয়ে এসে বাউন্ডারি হজম করে ৭ রান দিয়ে শুরু করেন।
১১তম ওভারে ৯ রান দেন। ১৫তম ওভারেই লঙ্কানদের সবচেয়ে বড় ধাক্কা দিয়েছেন তিনি পরপর দুই বলে চারিথ আসালঙ্কা (২১ বলে ১৯) ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে (০) সাজঘরে ফেরান। খরচ করেন ৩ রান। ১৭তম ওভারে ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে (২৬ বলে ২১) দারুণ টার্ন ও বাউন্সে পরাস্ত করে স্টাম্পিংয়ের শিকার করেন রিশাদ। ফলে মেরুদ- ভেঙে যায় শ্রীলঙ্কার।
৪ ওভারে ১০টি ডটে ২২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করেন তিনি। আর তাই বাংলাদেশ ম্যাচ জেতার পর ম্যাচসেরার পুরস্কারও পান। টি২০ ফরম্যাটে এটি তার প্রথম পুরস্কার এবং টি২০ ফরম্যাটেই কোনো জেনুইন বাংলাদেশী লেগস্পিনারের প্রথমবার ম্যাচসেরা হওয়ার ঘটনা। ম্যাচশেষে রিশাদ বলেছেন, ‘আমি শুধু নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছি।
প্রথম কয়েকটা বল করার পরই বুঝেছি এই পিচে কী হতে পারে। ওই হিসেবেই চেষ্টা করেছি। আমি কখনো ভয় নিয়ে বোলিং করি না। চেষ্টা ছিল যখনই বোলিংয়ে আসব, তখনই যেন দলকে উইকেট এনে দিতে পারি, ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারি।’