বিপিএলের শুরুটা এর চেয়ে ভালো হতে পারত না। প্রায় চারশ রানের একটি ম্যাচ। দুর্বার রাজশাহী দুর্দান্ত ব্যাটিং দিয়ে খেলেছে বড় ইনিংস। বরিশাল সে রান ছাড়িয়ে গেছে ঝোড়ো ব্যাটিং দিয়ে। চার-ছক্কার ফোয়ারা ছুটিয়ে দর্শকদের আনন্দে মাতাতে কমতি রাখেনি কোনো দল। রাজশাহীর ইয়াসির আলী রাব্বি ও এনামুল হক বিজয়ের ঝলক দেখার পর বরিশালের মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও ফাহিম আশরাফের চার-ছক্কা মুগ্ধ করেছে।
এক কথায় অসাধারণ একটি ম্যাচ ছিল দেখার জন্য। এই ম্যাচ দেখার পর টিকিট পেতে দর্শকদের বিড়ম্বনায় পড়ার হতাশা একটু হলেও লাঘব হয়েছে। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৯৭ রান করেছিল রাজশাহী। ১১ বল হাতে রেখে সে রান তাড়া করে ৪ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় বরিশাল। সেদিক থেকে বলতেই পারেন, একাদশ বিপিএল চ্যাম্পিয়নের মতোই শুরু করেছে ফরচুন বরিশাল।
একাদশ বিপিএলের সাত দলের সক্ষমতার রেটিং করা হলে রাজশাহী হয়তো তলানিতে থাকবে। তাসকিন আহমেদ ছাড়া বড় মাপের দেশি-বিদেশি ক্রিকেটার নেই তাদের। সেই দলের দেশি দু’জন ব্যাটারের বিস্ফোরক ব্যাটিং দেখা ছিল উপভোগ্য। এনামুল হক বিজয় স্ট্রাইক রেট কাঙ্ক্ষিত মানে রাখতে না পারলেও রাব্বিকে নিয়ে জুটি বড় করতে কিছুটা স্লো খেলতে হয়েছে তাঁকে। ১২৭.৪৫ স্ট্রাইক রেটে ৫১ বলে ৬৫ রান করেন বিজয়। চারটি চার ও পাঁচটি ছয় দিয়ে ইনিংসটি সাজান তিনি। মিডল অর্ডার ব্যাটার রাব্বি প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক মানসিকতা দেখান। ৩৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি। ৪৭ বলে ৯৪ রানে ডানহাতি অপরাজিত থাকেন। ৭টি চার ও ৮টি ছয় মেরে ২০০ স্ট্রাইক রেটে শেষ করেন তিনি।
অল্পের জন্য মৌসুমের প্রথম শতক করা হয়নি তাঁর। শেষ দুই বলে স্ট্রাইক পেলে হয়তো উদ্বোধনী ম্যাচে সেঞ্চুরি দেখার সুযোগ পেতেন সমর্থকরা।
বরিশাল ১৯৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুরা ভালো করেনি। রানের খাতা খোলার আগেই নাজমুল হোসেন শান্ত আউট। এনসিএল টি২০ থেকে ছন্দ নিয়ে বিপিএলে আসা জিসান আলমের বলে এলবিডব্লিউ হন জাতীয় দলের অধিনায়ক। তামিম ইকবালও ৭ রানে এলবিডব্লিউ হন তাসকিনের বলে। শান্ত, তামিমের পর কাইল মায়ার্স ব্যর্থ হলে ৩০ রানে ৩ উইকেট হারানো বরিশালের ড্রেসিংরুমে নীরবতা নেমে আসে। তাওহিদ হৃদয় ইতিবাচক শট খেলে সেখান থেকে ম্যাচে কিছুটা গতি আনেন। মাহমুদউল্লাহ ও শাহিন শাহ আফ্রিদি পরে ইনিংসে ভিত দেন। ১৭ বলে ২৭ রানের ইমপ্যাক্ট ইনিংস খেলেন শাহিন। মাহমুদউল্লাহ নিজেকে মেলে ধরেন দারুণভাবে। শাহিনকে নিয়ে ২৫ বলে ৫১ রানের জুটি করেন তিনি।
ফাহিম আশরাফকে নিয়ে ৩৫ বলে ৮৮ রানের অবিচ্ছেদ্য ইনিংসটি ছিল মারাত্মক। পাঁচ চার ও চার ছয়ে ২১৫.৩৮ স্ট্রাইক রেটে ২৬ বলে হার না মানা ৫৬ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। ৭ ছয়ে ২৫৭.১৪ স্ট্রাইক রেটে ২১ বলে ৫৪ রান করেন ফাহিম। অথচ উইকেটে সেট হতে প্রথম ৭ বল খেলে ১ রান করেছিলেন তিনি। বরিশালের জয়ের নায়ক ফাহিম ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমি ৭ বলে ১ রানে ছিলাম। মাহমুদউল্লাহ ভাই তখন আমাকে বলেছিলেন– মাথা ঠান্ডা রেখে উইকেটে থাকো, রান হবে। এ রকম সিনিয়র খেলোয়াড় দলে থাকলে ভালো।’