ভুলে যাওয়ার মতো একটা বিপিএল কেটেছে নাজমুল হোসেন শান্তর। সিলেট স্ট্রাইকার্সের জার্সিতে বলার মতো কোনো পারফরম্যান্স নেই তার। এর মধ্যেই খবর আসে তার বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হওয়ার। সাকিব আল হাসানকে সরিয়ে ২০২৪ সালের জন্য সব ফরম্যাটের নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে শান্তর কাঁধে।
একে রানে নেই, এর ওপর অধিনায়কত্বের চাপ। কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছিল শান্তর সামনে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে প্রথমবার স্থায়ী অধিনায়ক হিসেবে মাঠে নেমে তার সেই ‘চাপ’ অনুভব করা ক্রিকেটপ্রেমীরা ঠিকই ধরতে পেরেছেন। অবশ্য ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙে শান্তর ফিরে আসতে সময় লাগেনি। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে যাই হোক, দেশের জার্সিতে পাওয়া গেছে ধারালো শান্তকে। লঙ্কানদের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ছক্কা হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিতের সঙ্গে হাফসেঞ্চুরিও পূরণ করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
নেতৃত্বের চাপ সরিয়ে ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙে শান্ত রানে ফিরেছেন। সৌম্য সরকারের ব্যাটে ঝলক দেখা যাবে কবে? প্রশ্নটা উঠছে কারণ বাঁহাতি ব্যাটার ধারাবাহিক ব্যর্থ হওয়ার পরও টিকে আছেন জাতীয় দলে। সাম্প্রতিক সময়ে বলার মতো কোনো পারফরম্যান্স নেই তার ব্যাটে। এবারের বিপিএলে শুরুর দিকে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে অপরাজিত ৭৫ রানের ইনিংস অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ওই শেষ, এরপর থেকে কেবলই হতাশার গল্প। ফরচুন বরিশালের শিরোপা জেতার পথে পরের দিকে তার সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ২২ রানের।
এরপরও সৌম্য টিকে গেছেন শ্রীলঙ্কা সিরিজে। শুধু টি-টোয়েন্টি নয়, ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচের দলেও আছেন তিনি। কিন্তু নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান একেবারেই দিতে পারছেন না বাঁহাতি ব্যাটার। সিলেটের প্রথম দুই টি-টোয়েন্টির একাদশে জায়গা হয়েছে তার। নেমেছেন ওপেনার হিসেবে। প্রথম ম্যাচে ১২ রান করার পর দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে করেছেন ২৬। ২২ বলে ২৬ রানের ইনিংস খেলার পরও হয়তো শেষ টি-টোয়েন্টির একাদশে জায়গা পেয়ে যাবেন সৌম্য। কারণ ম্যাচটি জিতেছিল বাংলাদেশ। অতীত ইতিহাস বলছে, বড় কোনও কারণ না হলে ‘উইনিং কম্বিনেশন’ ভাঙে না বাংলাদেশ।
যদিও সৌম্যর জাতীয় দলে জায়গা পাওয়াটা বিস্ময়করই। কোনও কিছু না করেই বাংলাদেশ দলের দরজা খুলে যায় তার। এবারও বিপিএলে আহামরি পারফরম্যান্স নয় তার, তারপরও ওপেনারের ভূমিকায় খেলে ফেলেছেন দুটো ম্যাচ। অতীতে ফিরে তাকালেও ব্যর্থতার সব ছবিই দৃশ্যমান হবে।
গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের ঠিক আগে বাংলাদেশ সফরে এসেছিল নিউজিল্যান্ড দল। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হঠাৎই সুযোগ পেয়ে যান সৌম্য। এখানে ভালো কিছু করলে তাকে বিশ্বকাপে নেওয়া হতে পারে, এমন সম্ভাবনাও ছিল। কিন্তু সেই ম্যাচে তিনি আউট হয়ে যান ২ বলে শূন্য রান করে। ফলে বিশ্বকাপে আর যাওয়া হয়নি তার।
এখানেই শেষ নয়, বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ দল যখন নিউজিল্যান্ড সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, সেই সময়ই এলো আরেকটি ‘সৌম্য-সংবাদ’। নিউজিল্যান্ড সফরের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে জায়গা হয়েছে তার। এবারও উল্লেখযোগ্য কিছু না করে!
পারফরম্যান্সের মাপকাঠিতেই একজন খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া নির্ভর করে। তাহলে কি সৌম্যর ক্ষেত্রে এই মাপকাঠি সঠিক মাপে হচ্ছে না? নাকি ওপেনার সংকটে বারবার যেতে হচ্ছে সৌম্যর দরজায়? কারণ যাই হোক, একটা বিষয় বাংলাদেশের ক্রিকেটে ‘ওপেন সিক্রেট’, সেটি হলো সৌম্যর মাথার ওপর আছে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের আশীর্বাদের হাত।
প্রথম দফায় যখন তিনি বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখন অনেকবারই শ্রীলঙ্কান কোচ বলেছেন, তার দেখা সবচেয়ে প্রতিভাবান ক্রিকেট সৌম্য সরকার। ব্যাটিং নয়, স্লিপে ক্যাচ নেওয়ার দক্ষতায় প্রথম নজর কেড়েছিলেন সৌম্য। ফলে দ্বিতীয় মেয়াদে হাথুরুসিংহে যখন কোচ হয়ে এলেন, তখন থেকেই গুঞ্জন শুরু- আবার জাতীয় দলে ফিরতে যাচ্ছেন সৌম্য। হলোও তাই।
পাওয়ার প্লে কাজে লাগিয়ে দ্রুত রান তুলতে পারেন সৌম্য। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে বোলারদের চোখে চোখ রেখে খেলতে পারেন শটস। হাথুরুসিংহের ক্রিকেট-দর্শনের সঙ্গে হয়তো খুব মানানসই এই ব্যাটার। কিন্তু তার ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতা একেবারেই নেই। হয় ইনিংসের শুরুতে আউট হচ্ছেন কিংবা বাজে শটে বিলিয়ে দিয়ে আসছেন উইকেট। এবারের বিপিএলেও বেশ কয়েকটি ম্যাচে দৃষ্টিকটু আউট হয়েছেন তিনি।
ঘরোয়া এই প্রতিযোগিতায় সময়টা বাজে গেছে সৌম্যর। সে-তো শান্তরও গেছে, বরং আরও বাজেভাবে। তবে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে জড়াতেই শান্ত ফিরেছেন স্বরূপে। যদিও দুই ম্যাচ পেরিয়ে গেলেও সৌম্যর ব্যাটে রানের দেখা নেই। তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে কি তবে সৌম্যর দিন। আগের ম্যাচে শান্ত পেরেছেন, এবার সৌম্য পারবেন?