ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে এখনও পরিবারের হেফাজতে দেওয়া হয়নি। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাদের স্বজনদের ডিবি কার্যালয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। অবশ্য গতকাল দুপুরে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছিলেন, নিরাপত্তা ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া ছয় সমন্বয়ককে শিগগিরই ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু গতকাল রাত ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সমন্বয়কারীরা ডিবি হেফাজতেই ছিলেন। বাইরে অপেক্ষা করছিলেন তাদের স্বজন। নাহিদের বাবা বদরুল আলম সমকালকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আমার স্ত্রী ছেলের অপেক্ষায় ডিবি অফিসেই রয়েছেন।
ছয় সমন্বয়ক রোববার রাতে ডিবি কার্যালয় থেকে ভিডিও বার্তায় কোটাবিরোধী আন্দোলন প্রত্যাহার করে বিবৃতি দেন। এ বিবৃতি জোর করে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ডিবির বিরুদ্ধে। এ প্রসঙ্গে ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, ‘অনুরোধ, গুজব ছড়াবেন না। ছয় সমন্বয়কারী অনুভব করেছেন, সরকার তো সব দাবি মেনেই নিয়েছে। এ কারণে তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।’
এদিকে রোববার ছয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও নুসরাত তাবাসসুমকে ডিবি কার্যালয়ে খাবার খাইয়ে সেই ছবি হারুন অর রশীদ তাঁর ফেসবুক পেজে পোস্ট করেন। এ বিষয়ে গতকাল হাইকোর্ট বলেছেন, ‘ডিবি অফিসে যাকে তাকে ধরে নিয়ে যাবেন, তার পর খাবার টেবিলে বসাবেন। এভাবে জাতির সঙ্গে মশকরা করবেন না।’
এ ব্যাপারে হারুন বলেন, ‘হাইকোর্ট কী বলেছে, আমরা এখনও জানি না, শুনিনি। সেই মন্তব্য শুনে আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করব।’
সমন্বয়কদের ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে আশ্বাস পেয়ে গতকাল দুপুরের আগ থেকে ডিবি কার্যালয়ে অপেক্ষা করেন স্বজনরা। রাত সাড়ে ৮টায় দিকে নাহিদের ফুফু নুরুন্নাহার জানান, নাহিদকে নেওয়ার জন্য দুপুর ১২টা থেকে তাঁর মা মমতাজ নাহার ডিবি কার্যালয়ে অপেক্ষা করছেন। অন্য সমন্বয়কদের অভিভাবকও রয়েছেন।
এদিকে আত্মগোপনে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ গতকাল বলেন, দোষীদের বিচারের আওতায় না এনে সরকারের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা শত শত শহীদের রক্তের প্রতি চরম অসম্মান ছাড়া কিছুই নয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সরকারের এ প্রহসন প্রত্যাখ্যান করছে। তিনি আরও বলেন, সহপাঠীদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা ও নির্যাতন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে হবে। কারফিউ প্রত্যাহার করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে সাধারণ শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। এর পর আমরা আলোচনা করে আন্দোলন প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।
সমন্বয়কদের দেখতে সোহেল তাজ ডিবিতে
সমন্বয়কদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গতকাল বিকেলে ডিবি কার্যালয়ে যান সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ। পরে সেখান থেকে বের হয়ে সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে ডিবি গেটের সামনে তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে যে সম্পদ ধ্বংস হয়েছে, তা জনগণের টাকায় আবার করা যাবে। কিন্তু প্রাণের তুলনায় এ সম্পদ কিছুই না। সোহেল তাজ বলেন, ছাত্রছাত্রীর বুকে যেন আর একটা গুলিও করা না হয়। প্রত্যেকটা প্রাণহানির বিচার করতে হবে।