বেশ কয়েক দিন ধরে বাজারে ডিম সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এতে ডিমের ডজন ১৭০ টাকা ছাড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দাম কমাতে সাড়ে ৪ কোটি পিস ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি আমদানির ওপর থাকা শুল্ককর সাময়িকভাবে প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাম্প্রতিক বন্যায় বেশ কয়েকটি জেলায় অনেক মুরগির খামার পানিতে তলিয়ে গেছে। তাতে কমেছে মুরগি ও ডিমের উৎপাদন। তা ছাড়া বন্যার কারণে সবজি উৎপাদনও কমেছে। ফলে সবজির দর বেড়েছে। এ দুটি কারণে বাজারে ডিমের দর বাড়ছে। গত কয়েক দিনে দফায় দফায় বেড়ে ফার্মের ডিমের ডজন গত সোমবার ১৭০ টাকায় পৌঁছেছে। পাড়া-মহল্লায় কোথাও কোথাও এর চেয়েও বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। তবে আমদানির খবরে দাম কমতে শুরু করেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় ও বাজারদর স্থিতিশীল রাখতে গতকাল মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সীমিত সময়ের জন্য সাতটি প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এতে বলা হয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে দৈনিক প্রায় ৫ কোটি পিস ডিমের চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে ডিমের বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় ও বাজারদর স্থিতিশীল রাখতে আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ডিম আমদানি করা যাবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্যে মীম এন্টারপ্রাইজকে ১ কোটি, তাওসিন ট্রেডার্সকে ১ কোটি, সুমন ট্রেডার্সকে ২০ লাখ, আলিফ ট্রেডার্সকে ৩০ লাখ, হিমালয়কে ১ কোটি, প্রাইম কেয়ার বাংলাদেশকে ৫০ লাখ এবং জামান ট্রেডার্সকে ৫০ লাখ পিস ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
আমদানিতে কয়েকটি শর্ত মানতে হবে। যেমন– বার্ড ফ্লু মুক্ত দেশ থেকে ডিম আমদানি করতে হবে। আমদানি করা ডিমের প্রতিটি চালানের জন্য রপ্তানিকারক দেশের সরকার নির্ধারিত উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের প্রদত্ত এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু ভাইরাস ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ামুক্ত মর্মে সনদ দাখিল করতে হবে।
নির্ধারিত শুল্ককর পরিশোধ ও অন্যান্য বিধিবিধান মেনে আনতে হবে। ডিম আমদানির ১৫ দিন আগে সংশ্লিষ্ট সংগনিরোধ কর্মকর্তাকে অবহিত করতে হবে। অনুমতি পাওয়ার সাত দিন পরপর অগ্রগতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে।
এদিকে আমদানিতে শুল্ককর কমাতে গতকাল আবারও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে ট্যারিফ কমিশন। ডিম আমদানিতে বর্তমানে ৩৩ শতাংশ শুল্ককর দিতে হয়। চিঠিতে বলা হয়, গত ২৯ আগস্ট ট্যারিফ কমিশন থেকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পেঁয়াজ, আলু ও ডিম আমদানিতে শুল্ককর কমানোর বিষয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন এনবিআরে পাঠানো হয়। সুপারিশ অনুযায়ী গত ৪ সেপ্টেম্বর এনবিআর থেকে আলু ও পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়েছে। এতে স্থানীয় বাজারে এ দুটি পণ্যের মূল্যে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে।
চিঠিতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যার কারণে পোলট্রি শিল্পের বেশ ক্ষতি হয়েছে। ফলে অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম স্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। তাতে বাজারে ডিমের সরবরাহ ব্যবস্থায় এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ডিম শর্তসাপেক্ষে আমদানিযোগ্য পণ্য হওয়ায় সরকারের অনুমতি ছাড়া আমদানি করা যায় না। তাই কমিশন মনে করে, স্বল্প সময়ের জন্য শুল্ক প্রত্যাহার করা হলে ভোক্তারা কিছুটা স্বস্তি পাবেন।
আমদানির অনুমতির খবরে ডিমের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গত সোমবার বাজারে প্রতি ডজন ডিম ১৭০ টাকার আশপাশের দরে বিক্রি হলেও গতকাল ডজনে ১০ টাকা কমেছে। ঢাকার কারওয়ান বাজার ও মালিবাগ কাঁচাবাজারে প্রতি ডজন ডিম ১৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। যদিও পাড়া-মহল্লার দোকানে এর চেয়ে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হয়। কারওয়ান বাজারের ডিম ব্যবসায়ী সাইফুল গাজী বলেন, পাইকারিতে হাজারে ২০০ টাকার মতো কমেছে। খুচরায় ডজনে ১০ টাকা কমেছে। দুয়েক দিনের মধ্যে দাম আরও কমবে।
সারাদেশে ১১ লাখ টাকা জরিমানা সবজি, ডিমসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন বাজারে তদারকি করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গতকাল দেশের ৪৮টি জেলায় অভিযান চালিয়ে ১৩৯টি প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ ৮৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে ঢাকার মিরপুর ৬ ও ১১ নম্বরে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির বাজারে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে চারটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।