কথাটি তুললেই আগে বিরক্ত হতেন এক তারকা ক্রিকেটার। ডট বল বেশি খেলা এবং তাঁর স্ট্রাইকরেট নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা হলেই বিব্রত হয়ে পড়তেন, সাংবদিকদের জিজ্ঞাসা করতেন– এসব পুরোনো প্রশ্ন কেন বারবার করা হয় তাঁকে। টি২০ ম্যাচে তাঁর স্ট্রাইকরেট না দেখে গড় দেখার অনুরোধ করতেন। সেই ক্রিকেটার দলের সঙ্গে নেই বহুদিন, কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া ড্রেসিংরুমের দর্শনটা বোধ হয় এখনও আছে।
আর তাই তো বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তরও টি২০ ফরম্যাটে তাঁর ১১১.১৬ স্ট্রাইকরেট নিয়ে প্রশ্ন করায় মেজাজ গম্ভীর হয়ে যায়। ‘স্ট্রাইকরেট… স্ট্রাইকরেট… আমাদের দেশে স্ট্রাইকরেট নিয়ে অনেক কথা হয়। এই জিনিসটার জন্য সময় দিতে হবে।’ শান্তর অনুযোগ ছিল জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ঘরের মাঠে ব্যাটিং-সহায়ক পিচে তারা খেলেননি।
এখন প্রশ্ন হলো যুক্তরাষ্ট্রের ডালাস ও নিউইয়র্কে কি প্রত্যাশিত মানের ব্যাটিং পিচ পাবেন তারা। সাধারণত আইসিসির টুর্নামেন্টে ব্যাটিং-সহায়ক পিচের কদর বেশি। যদি সেটাই থাকে, তাহলেও কি বাংলাদেশ দল ২০০ রান করা বা এই রান তাড়া করার মতো সামর্থ্য রাখে। এখানেই স্ট্রাইকরেটের কাঁটার জ্বালা থেকে যায়। বাংলাদেশি ব্যাটারদের এই ফরম্যাটে স্ট্রাইকরেট ১২২-১২৩ এর কাছাকাছি। শুধু তাওহিদ হৃদয় ১৩৪ নিয়ে সম্ভাবনার জায়গা তৈরি করেছেন।
এবারের বিশ্বকাপে পরের রাউন্ডে যেতে হলে নেপাল আর নেদারল্যান্ডসের বাইরে গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে কোনো একটি দলকে হারাতে হবে। যেখানে অপেনার তানজিদ তামিম, তাওহিদ হৃদয়, জাকের আলি ও রিশাদ হোসেনদের কারোই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি২০ ম্যাচ খেলার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই।
দলের অভিজ্ঞ যে দুই ব্যাটার সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ– তাদেরও প্রোটিয়াদের বিপক্ষে রেকর্ড খুব ভালো নয়। সাকিবের ৭ ম্যাচে মোট রান ৭৩, সর্বোচ্চ ইনিংসের স্ট্রাইকরেট ৮৬.৬৬। রিয়াদের সেখানে ৩ ম্যাচে মোট ৩০ রান, প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ইনিংসের স্ট্রাইকরেট ১২০। লিটন দাসের স্ট্রাইকরেট ১০৯.৬৭ । সৌম্য সরকারের অবশ্য প্রোটিয়াদের বিপক্ষে রেকর্ড কিছুটা ভালো, ৫ ম্যাচে ৯৯ রান, সর্বোচ্চ স্ট্রাইকরেট ২৫০।
অবশ্য গত দুই বছরে এই স্ট্রাইকরেট বাড়াতে কাজ করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৪৭.৬৬ গড়ে তাঁর স্ট্রাইকরেট বেড়ে ১৪৮.৯৫। এ সময়ের মধ্যে সবেচেয়ে বেশি টি২০ খেলেছেন শান্ত। অথচ ২৬.৬৪ গড়ে তাঁর স্ট্রাইকরেট মাত্র ১১৪.৪১। এবারের বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া অধিনায়কের মধ্যে কেবল উগান্ডার দলনেতা বায়ান মাসাবা। যদিও তিনি বোলার, তাঁর স্ট্রাইকরেট ১০৭.৯৪।
এই তালিকায় সবার ওপরে প্রোটিয়া অধিনায়ক এডেন মার্করামের (১৫০.৬৭)। তার পর রয়েছেন ইংল্যান্ডের জশ বাটলার ( ১৪৪.৬১), উইন্ডিজের রোভম্যান পাওয়েল( ১৪৪.৮১), ভারতের রোহিত শর্মা (১৩৯.৯৭), অস্ট্রেলিয়ার মিচেল মার্শ ( ১৩৫.৩৪), শ্রীলঙ্কার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ( ১৩০.৫২) ও পাকিস্তানের বাবর আজম (১২৯.৪১)।
শান্তর মতো অফফর্ম চলছে লিটন দাসেরও। কোচিং স্টাফদের পরামর্শেই এবার জিম্বাবুয়ে সিরিজের শেষ দুটি ম্যাচ না খেলিয়ে নেটে অনুশীলন করিয়ে তাঁর আত্মবিশ্বাস ফেরানোর চেষ্টা করেন। শুধু লিটন নন, সাকিবও তাঁর ব্যাটিং ফর্ম নিয়ে আলাদা কাজ করেছেন। যেমনটা করা হয়েছিল চোট থেকে ফেরার পর সৌম্য সরকারকে নিয়ে।
তবে বিপিএল থেকে স্ট্রাইকরেট নিয়ে উন্নতির সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত বোধ হয় রেখেছেন তাওহিদ হৃদয়। মিডল অর্ডারে তাওহিদের পাশাপাশি ফিনিশার হিসেবে দুই নবাগত রিশাদ (১৩১.৬৬) ও জাকের আলির (১২৮) স্ট্রাইকরেটে ভরসা রাখছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
টি২০ ম্যাচে বড় স্কোর করতে হলে অন্তত দু-তিনটি ওভারে বিশ রানের কাছাকাছি নিতে হয়। দলের ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্পের বিশ্বাস, সেরকম ব্যাটার তাঁর হাতে রয়েছেন। ‘তানজিদ প্রতি সপ্তাহে, প্রতি মাসে উন্নতি করছে। নিজের শক্তির জায়গা প্রয়োগ করে ভালো করছে সে। লিটন হয়তো রান পাচ্ছে না, তার শট সিলেকশনে ভুল হচ্ছে। যেটা নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি, সে তার শক্তির জায়গাটা ফিরে পাবে। মাহমুদউল্লাহর অভিজ্ঞতা এবং ফর্ম আমরা ফিনিশিংয়ে কাজে লাগাতে চাই।’ ব্যাটিং কোচের কথাতেই পরিষ্কার, স্ট্রাইকরেটে অন্যদের যে দুর্বলতা আছে, তা কোন কোন হাত দিয়ে পূরণ করতে চাই টিম ম্যানেজমেন্ট।