মুষলধারে বৃষ্টি শেষে ঝকঝকে রুপালি রোদের যে সৌন্দর্য, বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের পর বাংলাদেশ দলের ছবিটাও তেমনি অপরূপ। খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ ও সাপোর্ট স্টাফ মিলে একটি সুখী পরিবার তারা। যেখানে মন খারাপের বিষয় নেই, পুরোটাই ভালো লাগার আবেশে বুঁদ হয়ে থাকা।
আসলে হাসি, গল্পে দিন পার করে দেওয়ার উপলক্ষ এনে দিয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে হারানোর খুশি। ম্যাচ শেষে মিক্সড জোনে দাঁড়িয়ে রিশাদ হোসেন তো বলেই রেখেছেন– ‘একটি দিন আনন্দ করতে দেন। পরের ম্যাচে কী হবে, তা পরে দেখা যাবে।’ গত দু’দিন ভালোই জয় উপভোগ করেছেন ক্রিকেটাররা। ডালাস থেকে নিউইয়র্কে ফেরার পুরো পথটাই ছিল আনন্দভ্রমণ। তবে কি বিশ্বকাপ এমনই এক মঞ্চ, যেখানে সব কিছু দ্রুত বদলায়।
খেলোয়াড়দের ছুটতে হয় রোলার কোস্টারের মতো। দ্রুত হানিমুন পর্ব শেষ করে আজই আবার নব-উদ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশ্বকাপের পরের ম্যাচ খেলতে হচ্ছে নাজমুল হোসেন শান্তদের।
টি২০-এর এই বিশ্বকাপ হচ্ছে ২০ দলে, চার গ্রুপে। দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস, নেপালকে নিয়ে বাংলাদেশের ‘ডি’ গ্রুপ ডেথ গ্রুপেরও তকমা পেয়েছে। চার ম্যাচের দুটিতে হারলেই গ্রুপ পর্বে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেওয়ার শঙ্কায় পড়তে হচ্ছে দলগুলোকে। টানা দুই ম্যাচ হেরে সেই ‘ডেঞ্জার জোন’ এখন শ্রীলঙ্কা। তারা অফিসিয়ালি বাদ না পড়লেও মৃত্যুকূপের খুব কাছে দাঁড়িয়ে। বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে সুপার এইটে উন্নীত হওয়ার দৌড়ে আছে ঠিকই, কিন্তু প্রাণপ্রদীপ নিভু নিভু।
সে ক্ষেত্রে প্রথম ম্যাচে জয় পাওয়া বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার পরেই সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। আসলে পয়েন্ট টেবিলের এই হিসাব এত দ্রুত পাল্টাতে শুরু করেছে, এক-একটি ম্যাচ শেষে দলগুলোর অবস্থানও পরিবর্তন হচ্ছে। বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের ফলাফলের প্রভাব যেমন শ্রীলঙ্কারও ওপরও পড়বে।
বাংলাদেশ জিতে গেলে স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে আরও কিছুটা পথ উঠে যাবে। আর প্রোটিয়ারা জয় পেলে গ্রুপ থেকে প্রথম দল হিসেবে উন্নীত হবে সেরা আটে। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই ভালো খেলার ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনি তো নিউইয়র্ক থেকে জয়ের ছন্দ নিয়ে সেন্ট ভিনসেন্টে যেতে চান। তাঁর মতে, ‘প্রথম ম্যাচ জয়ের আত্মবিশ্বাস থাকবে পরের ম্যাচে।
সবার মধ্যেই ভালো করার তাড়না থাকবে। সবকিছুই নির্ভর করে নির্দিষ্ট দিনে কে কেমন খেলছে তার ওপর। ভালো খেলা দলই ম্যাচ জিতবে। আমরা ভালো খেলার ব্যাপারে আশাবাদী।’
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ কন্ডিশনিং ক্যাম্পের পুরোটাই আবর্তিত হয়েছে টেক্সাসকেন্দ্রিক। হিউসটনে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ, ডালাসে বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলেছে। গত ১৫-২০ দিনে ডালাসের জল-হাওয়ায় মানিয়ে নিয়েছিল। নিউইয়র্ক সে তুলনায় অপরিচিত। ১ জুন ভারতের সঙ্গে গা-গরমের একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ হলেও নাসাউয়ের উইকেট ভালো করে পড়া হয়নি।
ড্রপ ইন উইকেট এক ম্যাচ খেলে বোঝাও কঠিন। ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়া নিউইয়র্কের এই ভেন্যুতে টানা খেলার সুযোগ পাচ্ছে না খুব বেশি দল। দক্ষিণ আফ্রিকা টানা দুটি ম্যাচ খেলে নাসাউকে বুঝে নিয়েছে, যেটা তাদের জন্য সুবিধা। এ ক্ষেত্রে একটু হলেও পিছিয়ে থেকে মাঠে নামতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। যদিও শান্ত জানিয়েছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কার মধ্যকার ম্যাচটি পুরো দল একসঙ্গে দেখেছে। এই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত সব ম্যাচই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে নিয়েছেন তারা। যেটা গেমপ্ল্যানে সুবিধা দেবে।
দিনটা নিজেদের হলে টি২০তে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে প্রথম জয়ের স্বাদ পেতেও পারেন শান্তরা। বাংলাদেশকে না হয় ৮ বার হারিয়েছেন কাগিসো রাবাদারা, কিন্তু রেকর্ড তো আর নির্দিষ্ট এক দলের জন্য চিরস্থায়ী নয়, পরিবর্তন তো হতেই পারে। সেটা নয়, লং আইল্যান্ডের নাসাউ কাউন্টি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে হোক।