নিজের কিডনি দিয়ে স্বামীর জীবন বাঁচিয়েছিলেন, সেই স্বামী সুস্থ হয়ে জড়িয়ে পড়লেন পরকীয়া ও অনলাইন জুয়ায়। শুধু তা-ই নয়, স্ত্রীকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে প্রেমিকার সঙ্গে বসবাস করছেন তিনি।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে পারিবারিকভাবে কলেজেপড়ুয়া তরুণী উম্মে সাহেদীনা টুনির সঙ্গে মালয়েশিয়া প্রবাসী যুবক তারেকের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পরই তারেক ও টুনির সংসার আলো করে আসে একটি পুত্রসন্তান। নাম রাখা হয় আজমাইন দিব্য। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। তবে, ২০০৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন তারেক। চিকিৎসকেরা জানান, তার দুটি কিডনিই প্রায় অচল। রোগীকে বাঁচাতে হলে অতি দ্রুত ডায়ালাইসিস শুরু করাতে হবে।
তবে, স্বামীর ডায়ালাইসিসে রাজি ছিলেন না টুনি। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য স্বামীকে ভারতে নিয়ে যাবেন। কোনো ধরনের কালক্ষেপণ না করে এক সপ্তাহের মধ্যেই স্বামীকে নিয়ে ভারতে পাড়ি জমান। তামিলনাড়ুর বিখ্যাত সিএমসি হাসপাতালে শুরু হয় তারেকের চিকিৎসা।
পরিকল্পনামাফিক তারেকের চিকিৎসা শুরু হয় ভারতে। কয়েক বছর পর চিকিৎসকরা জানান, রোগীকে বাঁচাতে হলে অতি দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। তখন স্ত্রী টুনিই এগিয়ে আসেন। নিজের কিডনি দিয়ে তিনি স্বামীকে প্রাণে বাঁচান। টুনি ভেবেছিলেন, এবার হয়তো তার কষ্টের জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে। কিন্তু তারেকের এমন কর্মকাণ্ড বিষয়টিকে ভুল প্রমাণ করেছে। সুস্থ হয়েই পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন তারেক । ডিভোর্সি এক নারীর প্রেমে আসক্ত হয়ে পড়েন। পাশাপাশি অনলাইন জুয়ার নেশাও পেয়ে বসে তাকে।
টুনি ভেবেছিলেন, এবার হয়তো তার কষ্টের জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে। কিন্তু তারেকের এমন কর্মকাণ্ড বিষয়টিকে ভুল প্রমাণ করেছে। সুস্থ হয়েই পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন তারেক । ডিভোর্সি এক নারীর প্রেমে আসক্ত হয়ে পড়েন। পাশাপাশি অনলাইন জুয়ার নেশাও পেয়ে বসে তাকে।যেই স্ত্রীর কারণে নতুন জীবন তিনি ফিরে পেলেন, একসময় তাকেই মারধর করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে মারধর করে স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে পরকীয়া প্রেমিকার সঙ্গে গিয়ে ওঠেন।
টুনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময় কাজের অজুহাতে ঢাকায় গিয়ে সময় কাটাত তারেক। একসময় জানতে পারি, তাহমিনা নামের একজন ডিভোর্সি নারীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়ায় লিপ্ত সে। তারেকের মোবাইল ঘেঁটে এসবের প্রমাণও পাই। বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে, সে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। একপর্যায়ে আমাকে পুরো বাড়ি তার নামে লিখে দিয়ে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য চাপ দেয়।
এদিকে, গত ২ ফেব্রুয়ারি স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে সাভার থানায় গিয়ে তারেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন টুনি। কিন্তু এরপরই আবারও নিজের খোলস পাল্টে ফেলেন ধূর্ত তারেক। টুনিকে বুঝিয়ে একদিন পরেই (৪ ফেব্রুয়ারি) থানায় মুচলেকা দিয়ে সেই অভিযোগ তুলে ফেলেন তিনি।
বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়ার পর এবার নির্যাতনের পরিমাণ আরও বেড়ে যায় তারেকের। এক পর্যায়ে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে নিজের বাবার বাড়িতে ওঠেন টুনি। এরপর ২২ এপ্রিল তারেকের বিরুদ্ধে ঢাকার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন। ২৪ এপ্রিল সেই মামলায় তারেক গ্রেপ্তার হন। গত ৪ জুন এক মাস কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্ত হন তিনি। জামিনে মুক্ত হয়েই পরকীয়া প্রেমিকার বাড়িতে গিয়ে ওঠেন তারেক। সেখান থেকেই স্ত্রীকে চাপ দেন ডিভোর্স দিয়ে বাড়িটা তার নামে লিখে দেওয়ার জন্য।
এ প্রসঙ্গে টুনি বলেন, আমার স্বামীকে আমি সবসময় ফেরেশতার মতো মনে করতাম। ভাবতাম, তিনি কখনোই মিথ্যা বলেন না। তবে, আমার পরিবারের মানুষ ধাপে ধাপে সতর্ক করেছিল। কারো কথা কানে নিইনি। বরং তারেকের কথায়, অনেক সময় পরিবারের মানুষদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেছি। অথচ সেই মানুষটা আজ আমার সব কেড়ে নিল। তাকে কিডনি দেওয়ার পরে আমার শারীরিক অবস্থাও দিনদিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। চিকিৎসকেরাও নানাভাবে সতর্ক করেছেন।
তিনি আরও বলেন, আমি জানি, সুস্থভাবে হয়তো বেশিদিন আর বাঁচতে পারব না। তবুও যেই মানুষটার কষ্ট কখনো নিজের চোখে দেখতে পারতাম না, যার জন্য সবকিছু ত্যাগ করেছি, সেই কিনা আমাকে এভাবে ঠকালো! আমার পেটে অপারেশনের জায়গাতে লাথি মারলো…! আমি চাই না, আমার মতো পরিণতি আর কোনো মেয়ের হোক। আর কোনো মেয়ে যেন ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে নিজের জীবনকে এমন অন্ধকারে না ঠেলে দেয়।’
এদিকে, জামিনে মুক্ত হওয়ার পর থেকে তারেকের খোঁজ নেই। নিজের নম্বরও পরিবর্তন করে ফেলেছেন তিনি । ফলে তার সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তার আইনজীবীর সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাকেও পাওয়া যায়নি।