অদক্ষ বাজার ব্যবস্থা পণ্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এ ছাড়া পণ্য উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, বাজার আধিপত্য প্রভৃতি কারণে স্থানীয় বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। কৃত্রিম সংকট, ঋণপত্র খোলায় বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা, টাকার মূল্যমান হ্রাস, সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থায় অদক্ষতা প্রভৃতি বিষয় পণ্যমূল্য ওঠানামায় ভূমিকা রাখছে।
নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদকের ভূমিকাই প্রধান। মধ্যস্বত্বভোগীদের মুনাফার হার তুলনামূলক কম। দেশে উৎপাদিত ১৬টি পণ্যের মধ্যে ১৩টিরই উৎপাদন খরচের তুলনায় খুচরা পর্যায়ে যেতে দাম দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। চাল, পেঁয়াজ, আদা, আলু, লবণ, মরিচসহ এসব পণ্যে ১০২ থেকে ৮৩০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে। উৎপাদকরা ৪৪ থেকে ৪৮০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করেছেন।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে এক জরিপে এমন তথ্য পেয়েছে। জরিপের ফল পর্যালোচনায় ঢাকা চেম্বার গতকাল ‘খাদ্য মূল্যস্ফীতি; নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নির্ধারণে গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করে।
গত ২০ থেকে ২৯ আগস্ট দেশের আটটি বিভাগের ৪৯টি জেলায় জরিপ পরিচালিত হয়। জরিপে ৬০০ জনের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়, যার মধ্যে উৎপাদনকারী, আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী রয়েছেন। মোট ২১টি খাদ্যপণ্যের ওপর তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
জরিপে দেখা যায়, পণ্যের চাহিদা, উৎপাদন, জোগান এবং আমদানির সমন্বয়হীনতার কারণেও অনেক ক্ষেত্রে পণ্যের দাম বাড়ছে। অদক্ষ বাজার ব্যবস্থা, তথ্যের অসামঞ্জস্য, স্থানীয়ভাবে পণ্য উৎপাদন হ্রাস, সার, বীজ, তেল ও কীটনাশকের উচ্চমূল্য এবং জেলাভিত্তিক ব্যবসায়িক কার্যক্রমও এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
ঢাকা চেম্বারে এ বিষয়ে অনুষ্ঠানে চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়লেও উৎপাদকরা ন্যায্য মূল্য পান না। কখনও কখনও দাম বাড়ানোর জন্য পরোক্ষ খরচ জড়িত হয়। স্টোরেজ, পরিবহন এবং পণ্য প্রক্রিয়াকরণ পর্যায়ে খরচ কমাতে পারলে দাম তুলনামূলকভাবে কমে। ঢাকা চেম্বারের নির্বাহী সচিব (গবেষণা) একেএম আসাদুজ্জান পাটোয়ারী মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. সায়েরা ইউনুস বলেন, শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে পণ্যের দাম কমানো সম্ভব নয়। এ জন্য সরকারকে প্রান্তিক পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রায় ৯বার নীতি সুদহার পরিবর্তন করলেও বাজারে এর প্রভাব তেমন উল্লেখজনক নয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ট্রেড সাপোর্ট মেজারস উইংয়ের যুগ্ম সচিব ড. সাইফ উদ্দিন আহম্মদ আমদানি খরচ কমানো, বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধা বাড়ানো, ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি সুবিধা বাড়ানো প্রভৃতির ওপর জোর দেন।