পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম বেলুচিস্তান প্রদেশে যাত্রীবাহী ট্রেনে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের হাতে জিম্মি যাত্রীদের উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এরই মধ্যে ১০৪ জিম্মিকে উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যদিকে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে সশস্ত্র গোষ্ঠীর অন্তত ১৬ সদস্য নিহত হয়েছেন।
দেশটির গণমাধ্যম জিও টিভি, বিবিসি, হিন্দুস্তান টাইমস, টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার বেলুচিস্তানের বোলান এলাকার কাছে কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস নামের যাত্রীবাহী ট্রেনে হামলা চালায় সশস্ত্র একটি গোষ্ঠী। তারা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে যাত্রীদের জিম্মি করে।
সর্বশেষ পাওয়া খবরে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও টিভি জানিয়েছে, এখনো অভিযান চালাচ্ছে পাকিস্তানের সেনারা।
খবরে আরও বলা হয়, বেলুচিস্তানের বোলান এলাকায় জাফর এক্সপ্রেসে নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান শুরু করেছে। অভিযানে জিম্মি ১০৪ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া অভিযানে ১৬ জন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য নিহত হয়েছেন।
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৫৮ জন পুরুষ, ৩১ জন নারী ও ১৫ জন শিশু রয়েছে। এ ছাড়া ১৭ জন আহত যাত্রীকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে। অন্য যাত্রীদের উদ্ধারে এখনো অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী।
জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনটি কোয়েটা থেকে পেশোয়ার, খাইবার পাখতুনখোয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। ট্রেনটির ৯টি বগিতে ৪০০ জনেরও বেশি যাত্রী ছিল।
নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে জিও টিভি জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের পর সন্ত্রাসীরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে যায়। আক্রমণকারীরা তাদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করছে।
জানা গেছে, সন্ত্রাসীরা আফগানিস্তানে তাদের মাস্টারমাইন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং নারী-শিশুদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। এ ছাড়া এলাকার কঠিন ভূ-প্রকৃতি অভিযানকে আরও জটিল করে তুলছে।
আক্রমণকারীরা ট্রেনের ওপর আক্রমণ করার আগে রেলপথে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, তারা লোকোমোটিভে গুলি চালিয়েছিল, যার ফলে চালক আহত হন। ট্রেনটি একটি সুড়ঙ্গের ঠিক আগে থেমে যায়। আফগানিস্তান ও ইরানের সঙ্গে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে একটি দুর্গম, পর্বতাঞ্চলীয় এলাকায় ট্রেনটি তারা দখলে নেয়।
এদিকে নিষিদ্ধ সশস্ত্র গোষ্ঠী বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এ হামলার দায় স্বীকার করেছে।
জিও নিউজের এক অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তালাল চৌধুরী বলেন, দুপুরের দিকে দুর্গম এলাকায় ট্রেনটিকে জিম্মি করা হয়। নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে শুরু করলে কিছু যাত্রীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে কতজনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে তা তিনি প্রকাশ করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, মুক্ত যাত্রীদের নিকটতম স্টেশনে এবং সবশেষে তাদের নির্ধারিত গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অনেক লোককে ট্রেন থেকে পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সন্ত্রাসীরা নারী ও শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে।
প্রাণহানির কারণে নিরাপত্তা বাহিনী সাবধানতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছে। অভিযান এখনো চলছে বলে জানান পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।