রূপকথার মতো অবিশ্বাস্য এক প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখেছেন লিটন কুমার দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ। রাওয়ালপিন্ডিতে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল বাংলাদেশ। সেই ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে লিটন খেলেন ১৩৮ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংস।
৭৮ রান করে তাঁকে যথাযোগ্য সঙ্গ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দু’জনের হাতে এমন এক রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে, যা দেড়শ বছরের টেস্ট ইতিহাসে আর দেখা যায়নি। এর পর শেষ বিকেলে ২ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে দারুণভাবে লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনেন হাসান মাহমুদ। তৃতীয় দিন শেষে পাকিস্তানের লিড ২১ রান, হাতে আছে ৮ উইকেট। তবে দারুণ জমে ওঠা এ লড়াইয়ে বাগড়া দিতে পারে আবহাওয়া। আগামী কয়েক দিন রাওয়ালপিন্ডিতে বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
বাংলাদেশের রান ২৬২তে যাওয়ার পেছনে লিটন ও মিরাজের সঙ্গে হাসান মাহমুদেরও অসামান্য ভূমিকা রয়েছে। ১০ নম্বরে নেমে তিনি সঙ্গ না দিলে লিটনের পক্ষে এমন স্মরণীয় ইনিংস খেলা সম্ভব ছিল না। ১৪৯ বলের নবম উইকেট জুটি কেবল স্বাগতিকদের চরম হতাশায়ই নিমজ্জিত করেনি; ৬৯ রান যোগ করে লিডের সম্ভাবনাও জাগিয়ে তুলেছিলেন তারা।
শেষ পর্যন্ত ১২ রান দূরে থামে বাংলাদেশ। হাসান মাহমুদের আসল কাজ তো বোলিং; বল হাতে পেয়ে বাংলাদেশের প্রত্যাবর্তনটাকে আরও জ্বলজ্বলে করে তুলেছেন তিনি। ১০ বলের স্পেলে চমৎকার এক আউট সুইংয়ে ওপেনার আবদুল্লাহ শফিককে উইকেটকিপার লিটনের হাতে ক্যাচ বানান। এর পর নাইটওয়াচম্যান খুররম শেহজাদকে বোল্ড করে স্বাগতিক শিবিরে অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দেন হাসান মাহমুদ।
আগের দিন খেলা শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে গণমাধ্যমের সামনে এসে তাসকিন আহমেদ একটা পরামর্শ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটারদের। দেড় বছর পর টেস্টে ফেরা এ পেসার বল পুরোনো হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে বলেছিলেন সতীর্থদের। তাঁর সে পরামর্শ হয়তো কানে তোলেননি তারা। না হলে দিনের শুরুতেই খুররম শেহজাদের বলে লেগসাইডে উচ্চাভিলাষী শট খেলে মিড উইকেটে দাঁড়ানো আবরারের হাতে ক্যাচ দিয়ে আসতেন না।
শেহজাদের পরের ওভারে একই রকম কোনাকুনি ডেলিভারি লেগের দিকে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে আসেন অপর ওপেনার সাদমান। ওই ওভারেই একই ভুল করেন আরেক বাঁহাতি নাজমুল হোসেন শান্তও। শেহজাদের ভেতরের দিকে আসা বলে অধিনায়ক শান্ত যেভাবে ব্যাট চালিয়েছেন, তাতে তাঁর দায়িত্বজ্ঞান নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। পরের ওভারে মির হামজার বলে ফ্লিক করে সহজ ক্যাচ দেন মুমিনুল। বাঁহাতি পেসার হামজার পরের ওভারে ইনফর্ম মুশফিকুর রহিমও ক্যাচ দিয়ে আসেন উইকেটকিপারের হাতে। এর পর সাকিবকে এলবির ফাঁদে ফেলেন শেহজাদ। ১২ ওভারের মধ্যে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে রীতিমতো খাদের কিনারে চলে যায় বাংলাদেশ।
সেই বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে শুরু করেন লিটন ও মিরাজ। চাপের মধ্যেও অস্বস্তি ছিল না তাদের ব্যাটিংয়ে। ভয় না পেয়ে বরং সাবলীল ব্যাটিং শুরু করেন দু’জন। শুরুতে মিরাজ পাল্টা আক্রমণের পথে হাঁটলেও লিটন ছিলেন একেবারে ওপেনারের ভূমিকায়। সতর্কতার সঙ্গে ব্যাটিং করেন এবং বল পুরোনো হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। লাঞ্চ থেকে ফিরে দু’জনই দারুণ সব শট খেলতে থাকেন। তখন চাপ সরে যেতে থাকে।
দু’জনের জুটি সেঞ্চুরি পেরিয়ে দেড়শতে চলে যায়। এর পর ১৬৫ রান যোগ করে সপ্তম উইকেট জুটিতে ইতিহাসে নাম লিখিয়ে ফেলেন তারা। ৫০ রানের নিচে ৬ উইকেট হারানোর পর টেস্ট ইতিহাসে এটাই একমাত্র দেড়শ রানের জুটি। ভীষণ সাহসী ব্যাটিং করা মিরাজ শেহজাদকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। ডানহাতি এ পেসারের পরের ওভারে তাসকিন এলবি হলে লিটনের সেঞ্চুরি নিয়ে শঙ্কা জেগেছিল। তবে হাসান মাহমুদ এসে সে শঙ্কাই কেবল দূর করেননি, লিডের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন। লিটনের এটা চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি।