আলেক্সি নাভালনি রাশিয়ার প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা। প্রতিশ্রুতিশীল ও দূরদর্শী এই নেতা বর্তমান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সবচেয়ে কট্টর সমালোচক। গতকাল শুক্রবার হঠাৎ কারাগারে মারা যান তিনি। তবে শুনতে অবাক লাগলেও নাভালনির ৪৭ বছরের জীবনে পুতিন কখনো তার নাম মুখে নেননি। মূলত তাকে দেশের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে বৈধতা না দিতেই এই কৌশল গ্রহণ করে আসছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) আর্কটিক অঞ্চলের একটি কারাগারে বন্দি অবস্থায় মারা যান নাভালনি। ইয়ামালো-নেনেটস জেলা কারা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার হাঁটার পরে হঠাৎ নাভালনি অসুস্থ বোধ করেন। অসুস্থ বোধ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এমন অবস্থা দেখে তাৎক্ষণিক জরুরি মেডিকেল টিমকে ডাকা হয়। তারা এসে চেষ্টা করলেও নাভালনিকে বাঁচাতে পারেননি। তার মৃত্যুর বিষয়টি পুতিনকেও অবহিত করা হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, নাভালনি সম্ভবত পুতিনের সবচেয়ে বিখ্যাত সমালোচক ছিলেন। এক দশকের বেশি সময় ধরে তিনি রুশ ক্ষমতা কাঠামোর কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ব্যক্তিদের দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করে আসছিলেন। এসব ঘটনার তদন্ত ভিডিও করে অনলাইনে ছাড়া হলে লাখ লাখ মানুষ দেখতেন।
ক্যারিশম্যাটিক এই নেতা ২০১৮ সালে পুতিনের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার কথা ছিল। এ জন্য নির্বাচনী প্রচার শিবিরও খুলেছিলেন। তবে তাকে সেবার ভোট করতে দেওয়া হয়নি।
২০২০ সালের আগস্টে সাইবেরিয়ার টমসক শহর থেকে উড়োজাহাজে করে মস্কোয় ফেরার পথে নাভালনিকে রুশ নার্ভ এজেন্ট ‘নোভিচক’ বিষ প্রয়োগ করা হয়। এ জন্য সরাসরি পুতিনকে দায়ী করে আসছিলেন নাভালনি। যদিও পুতিন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এরপর বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি দেশে ফিরলে মস্কো বিমানবন্দরেই তাকে গ্রেপ্তার করে রুশ কর্তৃপক্ষ। এরপর বিভিন্ন মামলায় ১৯ বছরের সাজা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে পাঠানোর আগে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে মস্কোতে বসবাস করতেন নাভালনি।
২০১৭ সালে এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিনকে নাভালনি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। তার কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান, রুশ সরকার কেন নাভালনিকে এত ভয় পায়? জবাবে পুতিন নাভালনির নাম মুখে নেননি। এর পরিবর্তে তিনি ‘আপনি যে ব্যক্তিদের নাম’ এবং ‘আপনি যাদের নাম নিয়েছেন’ এভাবে সাংবাদিকদের জবাব দেন। মূলত তিনি রাশিয়ার গণতন্ত্রপন্থি এই বিরোধী নেতাকে নিজের অস্তিত্বের হুমকি মনে করতেন।
নাভালনিকে জর্জিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মিখাইল সাকাশভিলি বা কিয়েভের ময়দান স্কোয়ারে রুশপন্থি প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করা ইউক্রেনীয়দের সঙ্গে তুলনা করতেন পুতিন। তিনি বলেন, ইউক্রেন সম্পর্কে একটি প্রশ্ন ইতোমধ্যেই জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। আপনি কি সাকাশভিলির মতো কয়েক ডজন লোক এখানে চান? আপনি যাদের নাম নিয়েছেন তারা সাকাশভিলিসের রুশ ভার্সন। আপনি কি চাইবেন সাকাশভিলিরা আপনার দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলুক? আপনি কি চাইবেন যে আমরা এক ময়দান স্কোয়ার থেকে অন্য ময়দানে যায়? অভ্যুত্থানের চেষ্টা থেকে বাঁচতে? আমাদের ইতোমধ্যে এসবের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আপনি কি চান এসব আবার ফিরে আসুক?