কেউ একজন হাতে লেখা প্ল্যাকার্ড সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন – ‘হু সেভ দ্য বাংলাদেশ টিম’। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজ হারার পর বাংলাদেশ থেকে যাওয়া এক সাংবাদিকের লাইভে হতাশা ঝরে পড়ছিল প্রবাসী ওই সমর্থকের কণ্ঠে। ফেসবুকেও সমর্থকদের ক্ষোভ আক্রোশে রূপ নিয়েছে। প্রবল আবেগ তাদের এই দলটিকে নিয়ে, প্রচণ্ড ভালোবাসা জড়িয়ে আছে বিশ্বাসে। কিন্তু তাতে যখন আঘাত লাগে, যখন বিশ্বাস ভেঙে যায় বাস্তবতার নিষ্ঠুরতায়, তখন আশাহত মন বিস্ফোরিত হয়, না হয় স্থির থাকে। হাতের কাছে কিছু না পেয়ে ফেসবুকের দেয়ালে অভিমানে প্রিয় দল নিয়ে কটাক্ষ করে।
তেমনই একটি পোস্ট গতকাল সারাদিন আন্দোলিত হয়েছে ফেসবুকে। যেখানে শান্তর ফটোকার্ড বানানো হয়েছে এই লিখে যে ‘আমেরিকা টিমে ছয়টা দেশ থেকে আসা প্লেয়াররা খেলেন। তারা যখন খেলে, ছয় দেশের মানুষই তাদের জন্য দোয়া করে। স্বাভাবিকভাবে তারা আমাদের থেকে বেশি দোয়া পায়।’ আদতে শান্ত এমন কিছু বলেননি। তবে ম্যাচের পর তিনি যেটা বলেছেন, তাতেও সমস্যা চিহ্নিত হয়নি। শান্ত বলেছেন, ‘দক্ষতায় কোনো সমস্যা নেই। আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে।’
তা এই পরিবর্তনটা আনার জন্য আর কী করতে হবে। দলে ১৫ ক্রিকেটারের সঙ্গে আছেন আটজন কোচ। বিশ্বকাপে যাওয়ার কয়েক মাস আগে মনোবিদের সেশনও করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ফিটনেস ক্যাম্প করেছেন। বিশ্বকাপের সব দলের আগে তারা যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য। তাদের আবদারে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটা সিরিজেরও আয়োজন করা হয়েছে। তাদের অনেকে চেয়েছিলেন বলে বিশ্রামও পেয়েছিলেন। তাদের জন্য ফি বছর বিপিএল রাখা হয়েছে। নতুন করে জাতীয় লিগেও টি২০ সংস্করণ যোগ হয়েছে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কথা না বলাই ভালো। বিভিন্ন দেশ থেকে গিয়ে গত দুই বছরে একটি দলকে প্রস্তুত করা হয়েছে। তাদের সঙ্গেই কিনা দেড়শর কাছাকাছি গিয়ে বুক ধড়ফড় আর হাত-পা কাঁপাকাঁপি অবস্থা!
ফেসবুকে ট্রল করা থামাবে কে? তারা যে ধোঁকা খেয়েছেন। অবশ্য এই দায় তাদেরও কিছুটা নিতে হবে। বেলুনে হাওয়া সমর্থকরাও কম দেননি! সুপারস্টার কালচারে তারা বুঁদ হয়ে ফ্যান বেজড পেজে তাদের লাইক, কমেন্টস, শেয়ারে ক্রিকেটারদের নিয়ে ভ্রান্ত ধারণায় গা ভাসিয়েছেন। ম্যাচের পর অপছন্দের কাউকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই ব্যস্ত থাকেন তারা। ভুলে গেলে চলবে না ছোঁয়াচে এই হাওয়া নির্বাচকদেরও স্পর্শ করে। সেখানেও দলের কম্বিনেশনের চেয়ে অনেক সময় ব্যক্তি প্রাধান্য পায়। অবশ্য এর দায় মূলধারার গণমাধ্যমও এড়াতে পারে না। কারন পারদ এখান থেকেও চড়ে। প্রত্যাশাগুলো শিশিরের মতো সূর্য উঠলে যা শুকিয়ে যায়।
এখন কথা হলো যে ‘হু সেভ দ্য টিম’। টেক্সাসে শুকিয়ে থাকা মুখগুলোর মধ্যে থেকে কোনো একজন যে সব কিছু ঘুরিয়ে দেবেন, তেমন কিছু মনে হয় না। আত্মবিশ্বাসের তলানিতে থাকা এই দলটিকে বাঁচাতে হলে দলের প্রত্যেককেই নিজ জায়গা থেকে সেরাটা খেলতে হবে। দলের সঙ্গে থাকা ম্যানেজমেন্টকে খুঁজে বের করতে হবে শান্ত যে মানসিকতা পরিবর্তনের কথা বলছেন, সেটা আসলে কী? একাদশে থাকা কারও মধ্যে কোনো জড়তা কাজ করছে কিনা?
বিশ্বকাপে যারা গিয়েছেন, তাদের তো ম্যাচ খেলার নিশ্চয়তা আছেই। অধিনায়কের একাদশে থাকার গ্যারান্টি রয়েছে। তাহলে কেন আমেরিকানদের মতো একটি দল হয়ে খেলতে পারছে না বাংলাদেশ। যে উন্মাদনা নিয়ে প্রবাসীরা বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ম্যাচ টিকিট কিনেছিলেন, তারাই এখন তা অর্ধেক দামে বিক্রি করে দেবেন বলে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন। বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের ম্যাচের ২১৭ ডলারের টিকিট ৫০ ডলারেও ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন অনেকে।
বিশ্বক্রিকেটে বাংলাদেশ এমন এক দল, যাদের পরিচয়ের বড় অংশ জুড়েই এই সমর্থকরা। তাদের কারণেই টেস্ট মর্যাদা পাওয়া, তাদের কারণেই আইসিসির মার্কেটিংয়ে বাংলাদেশের এত গুরুত্ব পাওয়া। সেই সমর্থককুল যদি এভাবে ধোঁকা খেতে থাকে, তাহলে বিসিবি কর্তাদেরও এর গরম আঁচ সইতে হবে।