ফাইনালটা দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে অষ্টম আশ্চর্যই; সাতবার ব্যর্থতার পর যে! তাই বলে এতটুকুতেই ইতি টানতে নারাজ প্রোটিয়া অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। প্রথম ফাইনালেই শিরোপা জিতে এতদিনের ব্যর্থতা-কষ্ট ধুয়ে-মুছে আনন্দ আলোয় ভাসাতে চান দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটকে। ভারতের জন্যও এই ফাইনাল ভীষণ আবেগের।
সেমি জেতার পর রোহিতের চোখে তো পানিই চলে এসেছিল। সেই পানি আবার মুছে দিয়েছেন বিরাট কোহলি। গুঞ্জন আছে, এটাই দু’জনের শেষ ফাইনাল। শিরোপা জিতে দুই কিংবদন্তির বিদায়ের পথটা রঙিন করে তুলতে চায় ভারত। বার্বাডোজে আজ কার মনোবাসনা পূরণ হবে?
২২৭ দিন পর রোহিত শর্মার নেতৃত্বে আরও একটি ফাইনালে নামছে ভারত। গত বছর ঘরের মাঠে ওয়ানডে বিশ্বকাপেও তাঁর অধিনায়কত্বে দুর্দান্ত খেলেছিল ভারত। গোটা টুর্নামেন্ট অপরাজিত থাকলেও ১৯ নভেম্বর আহমেদাবাদের ফাইনালে ট্রাভিস হেড-মিচেল স্টার্করা ছোঁ মেরে ট্রফিটা ছিনিয়ে নিয়েছিলেন।
এবারও অপরাজিত হিসেবে ফাইনালে এসেছে ভারত। তাদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকাও অপরাজিত। দুই অপরাজিতের লড়াইয়ে কার মুখে শেষ হাসি ফুটবে? দু’দল অপরাজিত হিসেবে ফাইনালে এলেও একটু ভিন্নতা তো রয়েছেই।
কানাডার বিপক্ষে বৃষ্টিতে বাতিল হওয়া ম্যাচটি ব্যতীত সব ম্যাচই দাপটের সঙ্গে জেতে সুপার এইটে জায়গা করে নেয় ভারত। সুপার এইটেও বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও অস্ট্রেলিয়াকে সহজেই হারিয়ে শেষ চারে নাম লেখান রোহিত-বুমরাহরা। এর পর সেমিতে শিরোপাধারী ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে ফাইনালে এসেছে তারা। দক্ষিণ আফ্রিকা সাত ম্যাচের সাতটিতে জিতে ফাইনালে এলেও স্বাচ্ছন্দ্যে কোনো ম্যাচে পার পায়নি। গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস, বাংলাদেশ ও নেপালের বিপক্ষে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতেছে। এর মধ্যে নেপাল ও বাংলাদেশের বিপক্ষে অনেকটা কপাল গুণেই উতরে গেছে।
সুপার এইটে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সহজ জয় পেলেও ইংল্যান্ড ও উইন্ডিজের বিপক্ষে জিতেছে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে। তবে সেমিতে আফগানিস্তানকে একেবারে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এত টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ জেতায় একটা জিনিস অবশ্য ভালো হয়েছে, প্রোটিয়াদের সঙ্গে প্রায় স্থায়ী হয়ে যাওয়া ‘চোকার্স’ ট্যাগটা প্রায় বিলিন হওয়ার পথে।
দু’দলেরই ফাইনালে আসার পেছনে বড় ভূমিকা বোলারদের। ভারতের দুই পেসারের মধ্যে আর্শদীপ সিং উইকেট (১৫) বেশি পেলেও জাসপ্রিত বুমরাহ দুর্দান্ত বোলিং করছেন। ফাইনালে তাঁকে মোকাবিলাই প্রোটিয়াদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। দুই স্পিনার কুলদীপ যাদব এবং অক্ষর প্যাটেলও কম যাচ্ছেন না।
আসর যতই এগোচ্ছে দুই স্পিনার যেন ততই শাণিত হয়ে উঠছেন। কেনসিংটন ওভালের মন্থর উইকেটে তারা দু’জনও ‘এক্স ফ্যাক্টর’ হয়ে উঠতে পারেন। প্রোটিয়া পেসাররাও দারুণ বোলিং করছেন। তাদের অধিকাংশ জয়ের পেছনে তিন পেসার আনরিখ নরখিয়া, কাগিসু রাবাদা ও মার্কো ইয়ানসেনের ভূমিকাই বেশি। আর শেষ ৪ ম্যাচে সুযোগ পেয়ে যেন তুরুপের তাস হয়ে উঠেছেন ‘চায়নাম্যান’ স্পিনার তাবরিজ শামসি।
ব্যাটিংয়ে যদিও প্রোটিয়ারা কিছুটা পিছিয়ে। বিশেষ করে আসরের শেষ দিকে এসে রোহিত শর্মা জ্বলে ওঠায় ব্যাটিং নিয়ে ভারতের দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে গেছে। এমনকি বিরাট কোহলির ভীষণ বাজে ফর্মও দলকে তেমন একটা ভোগাচ্ছে না। যদিও রোহিতের আশা, ফাইনালের জন্য সেরাটা জমিয়ে রেখেছেন কোহলি। এ ছাড়া সূর্যকুমার যাদব, ঋষভ পন্ত ও হার্দিক পান্ডিয়া ব্যাট হাতে প্রয়োজন মেটাচ্ছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের মধ্যে কিছুটা ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছেন কেবল ওপেনার কুইন্টন ডি কক।
তাঁর সঙ্গে কোনোদিন জ্বলে উঠছেন ডেভিড মিলার, কোনোদিন হেনরিক ক্লাসেন কিংবা ত্রিস্তান স্টাবস। অবশ্য ধারাবাহিকতা না থাকলেও প্রোটিয়া বিগ হিটারদের যে কেউ ম্যাচ বের করে নিতে সক্ষম। যদিও ইতিহাস কিছুটা ভারতের দিকেই হেলে। এখন পর্যন্ত দু’দলের ২৬ মোকাবিলায় ১৪টিতে জিতেছে ভারত।
প্রোটিয়ারা খুব বেশি পিছিয়ে নেই, ১১ জয় তাদের। তবে সব হিসাব পাল্টে দিতে পারে বৃষ্টি। গায়ানায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের ৬৮ রানে জেতা সেমিতে ভালোই ভুগিয়েছে বৃষ্টি। বার্বাডোজেও স্বস্তি মিলছে না। গতকালও সেখানে অঝোরে ঝরেছে। শনিবার ফাইনালের দিনেও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। বার্বাডোজের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা। ‘অ্যাকুওয়েদার’ অনুযায়ী শনিবার ম্যাচের সময় বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা ৪৭ শতাংশ। সে সময় পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৩৫ কিলোমিটার বেগে বাতাসও বইতে পারে। দুপুরের দিকে অবশ্য বৃষ্টির সম্ভাবনা কম। অবশ্য ফাইনালে ‘রিজার্ভ ডে’ থাকায় আবহাওয়া নিয়ে এত চিন্তা নেই।