ঢাকাই সিনেমার এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করেন তাঁর অনুজ চিত্রনায়করা। মৃত্যুর এত বছর পরও ঢাকাই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে সালমান শাহ যতটা প্রভাব বিস্তার করে রেখেছেন তা আর কোনো নায়কের বেলাতেই ঘটেনি। এখনও নায়করা নানা বক্তব্যে ও ইস্যুতে সালমান শাহকে স্মরণ করেন। সিনেমায় তাঁর মতো হতে চান, তাঁর স্টাইলে দর্শকদের ভালোবাসার মানুষ হতে চান। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চিত্রনায়ক সালমান শাহ (চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন) ঢাকার ইস্কাটনের ফ্ল্যাটে মারা যান। মাত্র ২৫ বছরের জীবন। অথচ এখনও কী বিস্তৃত প্রভাব তাঁর! মৃত্যুর এত বছর পরও তাঁর খ্যাতি সমুজ্জ্বল। প্রিয় এই নায়কের চলে যাওয়ার দিনে তাঁকে নিয়ে কথা বলেছেন তাঁর অনুজ শিল্পীরা।
নাটক দিয়েই অভিনয় শুরু করেছিলেন চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ। কিন্তু সব সময় মনে ইচ্ছা ছিল সিনেমায় অভিনয় করার। এই অভিনয়ের সাহস তিনি পেয়েছিলেন সালমান শাহর কাছ থেকে; পছন্দের নায়কের অভিনীত সব ছবি, স্টাইল, ব্যক্তিত্ব দেখে। সেই সিয়ামের ইচ্ছাটা পূরণ হলো। তিনি সুযোগ পেলেন সিনেমার নায়ক হওয়ার। তারপরে ব্যাটে-বলে মিলে গেল সালমান শাহকে ট্রিবিউট জানানোর। ঘটনাটা অনেকটাই কাকতালীয়। সেই প্রসঙ্গে সিয়াম জানান, তিনি ‘পোড়ামন-২’ সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় নাম লিখিয়েছিলেন। তাঁর চরিত্রের নাম ছিল সুজন। সে নব্বই দশকের এক চিত্রনায়কের ভক্ত। সেই নায়কই সালমান শাহ। সিয়াম বলেন, সিয়াম জানান, শৈশবে সালমান শাহ বলতে তিনি পাগল ছিলেন। এমনকি চলচ্চিত্রে আসার প্রেরণা সালমান শাহর কাছ থেকেই পেয়েছেন। সিয়াম বলেন, ‘আমাদের পুরো প্রজন্মটাই সালমান শাহর অভিনয়ে বুঁদ হয়েছিলেন। সালমান মানেই অন্য রকম ব্যাপার-স্টাইল, অভিনয়ের ধরন, জীবনযাপন আমাকে প্রভাবিত করেছিল। আমার প্রথম সিনেমায় যখন তাঁকে ট্রিবিউট জানানোর সুযোগ এল, তখন আর দেরি করিনি। এমন একজন নায়কের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এটাই সবচেয়ে ভালো সূচনা ছিল।’
এই সময়ের নায়ক নিরবের কাছেও সালমান শাহ একজন আদর্শের নাম। নিরব বলেন, কীভাবে সাবলীল অভিনয় করতে হয় সেটি ভালোভাবেই রপ্ত ছিল সালমান শাহর। আমাকে শোবিজে এনেছেন নির্মাতা অমিতাভ রেজা। তিনি বলতেন, পর্দায় অভিনয় না করাটাই হচ্ছে বড় অভিনয়। আর আমি যখন সালমান শাহর সিনেমা দেখতাম, সেই কথারই প্রমাণ পেতাম। প্রয়াত এ অভিনেতার সিনেমা দেখে কখনও মনে হয়নি তিনি অভিনয় করছেন। মনে হয় তিনি নিজের জীবনের কথা বলছেন। সালমান শাহ বাংলা চলচিত্রে আরও একশ একই রকমভাবে জনপ্রিয় থাকবেন বলে মনে করেন অভিনেতা নিরব হোসেন। তিনি বলেন, সালমানই একমাত্র নায়ক, সর্বমহলে যিনি গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে এবং তরুণদের স্টাইল আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিলেন। শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির দর্শকদের হলে গিয়ে ছবি দেখার অনভ্যাস দূর করেছিলেন সালমান শাহ।
সালমান শাহ অভিনীত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘জীবন সংসার’, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’-সহ অনেক সিনেমা হলে গিয়ে দেখেছেন অভিনেতা সাইমন সাদিক। ৯ বছর বয়স থেকেই তিনি দাদুর সঙ্গে কিশোরগঞ্জে ‘রঙমহল’ প্রেক্ষাগৃহে যেতেন। সালমানের সবই ভালো লাগে জানিয়ে সাইমন বলেন, ‘সালমান শাহ আমার স্টাইল আইকন। তাঁর সবই ভালো লাগে। তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী। আমাদের ভালোবাসার, ভালো লাগার স্বপ্নের নায়ক হয়ে থাকবেন আজীবন।
শৈশবে বগুড়ার উত্তরা হলে মায়ের সঙ্গে সালমান শাহর সিনেমা ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ দেখেছেন আদর আজাদ। পরবর্তী সময়ে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘পৃথিবী তোমার আমার’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’-সহ সালমান শাহর সিনেমাগুলো নানা মাধ্যমে দেখেছেন। সালমান তাঁর চোখে একজন স্টাইলিস্ট হিরো জানিয়ে আদর বলেন, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ সিনেমার টিকিট নিতে গিয়ে ঠেলাঠেলিতে মায়ের কানের দুল ছিঁড়ে গিয়েছিল। রক্তমাখা কান নিয়েও মা সিনেমা দেখেছেন। সালমান শাহর সব স্টাইলই ইউনিক। সময়ের চেয়ে বেশি এগিয়ে ছিলেন তিনি। স্টাইলিস্ট হিরো ছিলেন। আমরা এখনও সালমান শাহকে অনুসরণ করি। অনেক সিনেমার স্টান্ট তিনি নিজেই করতেন। সব মিলিয়ে সালমান মানেই অন্য রকম একটি ব্যাপার ছিল