পাকিস্তানকে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার ধাক্কা সীমানার ওপার ভারতেও আলোড়ন তুলেছে। দেশটির মিডিয়া রহিত শর্মাদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে পরোক্ষে। ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জিতবই– নাজমুল হোসেন শান্তরা এমন কথা না বললেও অনেক কিছুই বলা হয়ে গেছে ২২ গজে। এখন যে আত্মবিশ্বাস, ভারতের মাটিতে ভালো খেলতে কাজে দেবে।
রাওয়ালপিন্ডিতে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় করা বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা দেশে ফিরেছেন গতকাল রাতে। যদিও পাকিস্তান বধে তৃপ্তির ঢেকুর তোলার সুযোগ নেই। ক্রিকেটারদের শিগগিরই আটঘাট বেঁধে প্রস্তুত হতে হবে ভারত সফরের জন্য।
পাকিস্তান থেকে দুই ভাগে দেশে ফিরেছেন ক্রিকেটাররা। একদল করাচি থেকে দুবাই হয়ে ঢাকায় পৌঁছান রাত সাড়ে ১১টায়। আরেক গ্রুপ কাতারের দোহা হয়ে ঢাকা দেশে ফেরেন রাত ২টা ১৫ মিনিটে। পাকিস্তান থেকে ঐতিহাসিক সিরিজ জিতে সবাই যখন ঘরে ফিরেছেন, সাকিব আল হাসান তখন ইংল্যান্ডের বিমান ধরেছেন। যে গ্রুপটি করাচি থেকে দুবাই গেছে, সেই দলে ছিলেন সাকিব। তাঁর পথ যে ভিন্ন হয়ে গেছে দেশের বর্তমান বাস্তবতায়।
তাঁর মাথার ওপর ঝুলছে হত্যা মামলা। তিনি তাই নিজেকে প্রস্তুত করছেন বিকল্পভাবে। কাউন্টি দল সারের হয়ে ৯ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর সামারসেটের বিপক্ষে একটি ম্যাচ খেলবেন টনটনে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সিরিজ খেলতে ভারতের বিমান ধরবেন ইংল্যান্ড থেকেই। ১৫ সেপ্টেম্বর তাঁর জাতীয় দলের সতীর্থরা ঢাকা থেকে যাবেন চেন্নাইয়ে। সাকিবের মতো বিদেশি কোচিং স্টাফের বেশির ভাগ দলের সঙ্গে ফেরেননি। ছুটি কাটাতে যে যার দেশে ফেরার বিমন ধরেছেন। প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এবং ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্প ঢাকা হয়ে যাবেন অস্ট্রেলিয়া। ভারত সফরের আগে দলের সঙ্গে যোগ দেবেন তারা।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে বৈশ্বিকভাবে সমাদৃত হয়েছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের সাংবাদিকদের টাইগারদের গৌরবগাথা নিয়ে টুইট করতে দেখা গেছে। অসি সাংবাদিক জ্যারড কিম্বার এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘আমি চিন্তা করতে পারছি না যে, এর চেয়ে বড় কিছু হতে পারে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ছিল গ্রেট, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডকে হোম সিরিজে হারানো দারুণ ব্যাপার।
নিউজিল্যান্ডে জয় ছিল অনেক বড়। তবে বাংলাদেশ যখন পূর্ব পাকিস্তান ছিল, তখন কোটায় একজন ক্রিকেটারকে সুযোগ দেওয়া হতো তাদের মাঠে খেলা হলে। তারাই এখন পাকিস্তানে গিয়ে শুধু একটি টেস্ট ম্যাচ জেতেনি। ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে সব প্রতিকূলতা মোকালিবা করে।’ বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে এভাবে কোনো বিদেশি সাংবাদিক কবে লিখেছে, জানা নেই। ভালো খেলে শান্তরা যেমন সম্মানিত হচ্ছে, তেমনি প্রত্যাশার বেলুন আকাশ ছুঁয়েছে। দেশের মানুষ এখন থেকেই ভারত সফর নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন। দেশের বর্তমান বাস্তবতায় ভারতের বিপক্ষে বেশি চাওয়া থাকবে জয়। যদিও ভারতের মাটিতে টেস্টে তাদের হারানো সহজ হবে না। জাতীয় দলের সাবেক নির্বাচক হাবিবুল বাশারের মতে, ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয় ভারতের বিপক্ষে ভালো খেলতে উজ্জীবিত করবে। যদিও ভারতের মাটিতে টেস্ট জেতা কঠিন। কারণ, টেস্টে অনেক ভালো দল তারা। আমি আশা করব, ছেলেরা জয়ের জন্য খেলে বুক চিতিয়ে পাল্লা দেবে।’
ভারতের বিপক্ষেও বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সিরিজ। দুই টেস্টের একটিতে জিততে পারলেও রেকর্ড হবে। ক্রিকেট বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের সম্মান বেড়ে যাবে আরও। এ কারণেই মরিয়া হয়ে খেলার চেষ্টা থাকবে মুশফিকুর রহিমদের। দুয়েক দিন বিশ্রাম নিয়ে অনুশীলনে নেমে পড়তে পারেন তিনি। সাকিব আল হাসান তো ইংলিশ কাউন্টি ক্লাব সারের হয়ে একটি চার দিনের ম্যাচ খেলবেন নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত করতে।
বাংলাদেশের ভারত সফর শুরু টেস্ট দিয়ে। ১৯ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর চেন্নাইয়ে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে হবে প্রথম টেস্ট। দ্বিতীয় টেস্ট ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর কানপুরে। তিন ম্যাচ টি২০ সিরিজের প্রথমটি হবে ৬ অক্টোবর গোয়ালিয়র, ৯ অক্টোবর দিল্লি আর ১২ অক্টোবর হায়দরাবাদে। এই সিরিজ সামনে রেখে সব দিক থেকেই প্রস্তুতি আছে ক্রিকেটারদের। শান্তরা যখন রাওয়ালপিন্ডিতে টেস্ট খেলছিলেন, মাহমুদউল্লাহরা তখন ঢাকায় সাদা বলে অনুশীলনে ছিলেন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে।