জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী-অভিনেতা তাহসান খান এবং মডেল-অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলার দাম্পত্য জীবন দেখে সবার ইচ্ছে ছিলো এমন জীবন সঙ্গী পাওয়া। তবে দীর্ঘ ১১ বছরের সফল দাম্পত্য জীবন শেষে ২০১৭ সালে বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন তাঁরা। তবে মিথিলা জানিয়েছেন, এর দুই বছর আগে থেকেই আলাদা থাকছিলেন তাঁরা। অভিনেত্রী ভেবেছিলেন, হয়তো শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদ হবে না, সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সেটা ডিভোর্সেই গড়ায়।
তাহসান মিথিলার পরিচয় গানের মাধ্যমে। তাহসান তখন ব্ল্যাক ব্যান্ডের গায়ক। এক বন্ধুর সঙ্গে তাহসানের আড্ডায় গান শুনতে যান মিথিলা। এরপর ধীরে ধীরে সম্পর্ক পরিণয়ে গড়ায়। ২০০৬ সালের ৩ আগস্ট এই জুটি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তারপর তাদের ঘরে জন্ম নেয় ছোট্ট এক কন্যা শিশু যার নাম ঠিক করা হয় “আইরা তেহরীম খান”
এদিকে দেখতে দেখতে তাদের বিচ্ছেদের আট বছর কেটে গেছে। তবে বিয়েবিচ্ছেদ নিয়ে কখনও কাদা ছোড়াছুড়ি করেননি তাদের কেউই। দীর্ঘ সময় পর সেই সময় নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন মিথিলা। সম্প্রতি এক পডকাস্টে অংশ নিয়ে বিচ্ছেদের সময়কার মানসিক অবস্থা ও সংগ্রামের কথা প্রকাশ করেছেন তিনি।
মিথিলা বলেন, যেকোনো বিচ্ছেদ বা সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া সহজ না- খুবই কঠিন। বন্ধু বা এটা যে কোনো ক্ষেত্রে হতে পারে। আমি ছিলাম তখন অনেক অল্পবয়সী এবং তরুণী মা। আমি যেকোনো একটা ভালো মন্দ বিচার করবো বা কোনো একটা সিদ্ধান্তে আসবো, সেটার শক্তিই আমার ছিল না। কারণ আমার একটা এক বছরের বাচ্চা। আমার মানসিক অবস্থা ভালো ছিল না, যেখানে আমি কোনো একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারবো নিজের জীবনের।।
কঠিন সেই সময়কে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না জানিয়ে মিথিলা বলেন, ২৩ বছর বয়স থেকে আমি আমার জীবনকে একভাবে ভেবে এসেছিলাম। হঠাৎ করে জীবনটা সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন হয়ে গেছে। আমি আমার শ্বশুরবাড়ির মানুষদের সঙ্গে থেকেছি। একে তো আমার বাচ্চা আছে, তারপর আমি জানলাম সেই জায়গাটা আমার ভবিষ্যত না। আমি তখন চাকরি করতাম, কিন্তু আমার একটা গাড়িও ছিল না। কিন্তু আমার তো অভ্যাস ছিল গাড়িতে করে বাইরে যাওয়ার, আমার বাচ্চার অভ্যাস ছিল গাড়িতে চড়ার।
আলোচিত এই অভিনেত্রী বলেন, মেয়েদের নিজেদের আসলে জায়গা থাকে না। শ্বশুরবাড়ি আবার বাবার বাড়ি, থ্যাঙ্কফুলি এখন আমার নিজের জায়গা আছে। মেয়েদের সবার আগে যেটা দরকার সেটা হলো অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। এই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়া জীবনের অন্য সব সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়।
মিথিলা ভেবেছিলেন হয়তো শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদ হবে না, সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সেটা বিচ্ছেদেই গড়ায়। মিথিলা বলেন, এখন হয়তো মেয়েরা অনেক বেশি সিদ্ধান্ত নিতে পারছে, কারণ এখন মেয়েরা অনেক বেশি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পাচ্ছে। আমাকে ছোটবেলা থেকে মা বলেছে যা-ই করো নিজের পায়ে দাঁড়াবে। ফলে বিয়ের পরেও আমি আমার পড়াশোনা, চাকরি সব চালিয়ে গেছি। তবে তখন আমি অতটা অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন ছিলাম না যে একা একা অতটা ভাবতে পারবো, বাচ্চা মানুষ করতে পারবো। সেটার জন্য সময় লেগেছে।
তিনি বলেন, ২০১৫ সালে আমরা সেপারেশনে গেছি, তারপরে আরও দু বছর গেছে। আমি অপেক্ষা করেছি, ভেবেছি যে এটা ঠিক হয়ে যাবে, ঠিক হয়ে যাবে। মানসিকভাবে এটা মেনেই নিতে পারছি না। ২০১৭ সালে এসে সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম যে আমাদের মনে হয় এই সম্পর্কটা আসলেই কাজ করবে না।
তবে বিয়ের পরে তাহসান-মিথিলা একাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন। ‘আমার গল্পে তুমি’, ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস’, ‘ল্যান্ডফোনের দিনগুলোতে প্রেম’, ‘মধুরেন সমাপয়েত’ নাটকসহ বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেন এই জুটি। এ জুটি নাটক ছাড়াও একসঙ্গে গানও গেয়েছেন।