কাঁধে বেশ পুরোনো চোট, তবে তা সামলেই মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন টাইগার গতির তারকা তাসকিন আহমেদ। তবে তা হঠাৎ মারাত্মকভাবে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে গেল বছর ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ চলাকালীন। এতে করে আসরটির সব কটি ম্যাচে মাঠে নামতে পারেননি তিনি। ঐ টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার পর থেকেই রয়েছেন পুনর্বাসনে। তবে বর্তমানে বোর্ডের তত্ত্বাবধানে প্রস্তুত হচ্ছেন মাঠে ফেরার জন্য। আশা করা হচ্ছে, আসন্ন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ দিয়েই মাঠে ফিরতে চলেছেন তিনি। এমনটি গতকাল মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জানিয়েছেন তাসকিন।
মঙ্গলবার বিকেলে শুরুতে নিজের ফিটনেস সম্পর্কে তাসকিন বলেন, ‘আগের থেকে অনেকটা ভালো। কাঁধে একটু সমস্যা হয়েছিল। এখন আগের থেকে ভালো। তো বিপিএলটাই টার্গেট, এটা দিয়েই শুরু করা। ইচ্ছা আছে নতুন বছরের শুরুটা ভালো হোক।’ বিশ্বকাপের পর থেকেই পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন তাসকিন। তাই ঘরের মাটিতে টেস্ট ও নিউজিল্যান্ড সফরে ছিলেন না তিনি। কিন্তু এই পুরো সময়টাই তিনি চোট কাটিয়ে আবার মাঠে ফিরতেই প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছিলেন। শুরুতে অর্ধেক রানআপে বল করলেও এখন ফুল রান নিয়েই নেটে বল করছেন। এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কিছু সেশন করেছি, এ নিয়ে পাঁচটা সেশন বোলিংও করলাম। আগের থেকে ভালো লাগছে।’
গেল কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ পেস বোলিং ইউনিটের উন্নতি দেখা যাচ্ছে। আর এই ডিপার্টমেন্টের মূল শক্তি হিসেবে এগিয়ে চলেছে তাসকিন। সবশেষ নিউজিল্যান্ড সফরে তিনি ছিলেন না। তবে তার কমতিটা বুঝতে দেননি অন্য পেসাররা। শরীফুল ইসলাম, তানজিম সাকিব ও মোস্তাফিজুর রহমানরা দাপট দেখিয়েছেন কিউইদের মাটিতে। তাদের মাটিতে ইতিহাস গড়ে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ জিততেও এই পেসাররাই সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। আর সফরে না থাকলেও পেসারদের এমন কৃতিত্বে বেশ খুশি তাসকিন।
তিনি বলেন, ‘এটা আসলে খুবই শান্তির বিষয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি যখন ম্যাচগুলো দেখছিলাম, সবাই এত দারুণ বোলিং করেছে, এটা খুবই স্বস্তির। কারণ দিন শেষে ফাস্ট বোলারদের দাপটে এই প্রথম নিউজিল্যান্ডে আমরা জয় (ওয়ানডে) পেয়েছি। একজন ফাস্ট বোলার হিসেবে এটা আসলেও অনেক শান্তির।’ এ সময় দলের সঙ্গে না থাকার আফসোস আছে কি না, জানতে চাইলে জবাবে তাসকিন বলেন, ‘অবশ্যই আমিও মিস করেছি। কারণ আমি নিউজিল্যান্ডে বল করতে সব সময় উপভোগ করি, সিম মুভমেন্ট ভালো পাওয়া যায়। ঐখানে থাকতে পারলে আমি আরও উপভোগ করতাম, জেতার সাক্ষী হিসেবে আমিও থাকতে পারতাম। তো যাই হোক, দিন শেষে তো আমাদেরই দল, সবাই আমরা একই, তাই জিততে পারাটাই বড় জিনিস। সামনে বাংলাদেশ পেস বোলিং ডিপার্টমেন্ট আরও ভালো করবে, সবাই মিলে একসঙ্গে আরো জয় উপহার দিব।’
এদিকে জাতীয় দলের হয়ে গেল কয়েক বছরে ধারাবাহিক দারুণ পারফরম্যান্স করে বিশ্ব ক্রিকেটে বেশ পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন তাসকিন। এতে করে বিভিন্ন দেশে চলমান বিভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে খেলার অফারও পেয়ে থাকেন তিনি। তবে বোর্ড তাকে যেতে দেয় না। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাসকিনের ইনজুরি-প্রবণতার কারণেই ছাড়পত্র দেওয়া হয় না। এবারও সেই ধারাবাহিকতায় আইপিএলে খেলার প্রস্তাব পেয়েছিলেন তাসকিন আর এবারও তাকে বিসিবির পক্ষ থেকে আটকে দেওয়া হয়। পরপর তিন বার খেলার সযোগ পেয়েও এত বড় একটি টুর্নামেন্টে খেলতে না পেরে খানিকটা হতাশ তাসকিন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আসলে এ নিয়ে তিনবার সুযোগ এলো (আইপিএলে), এবারও মিস হলো। একটু খারাপ লাগে, কারণ খেলোয়াড় হিসেবে সবারই ইচ্ছে সব ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে অংশগ্রহণ করার। শুধু আইপিএল নয়, বিভিন্ন লিগ থেকেই অফার আসে।’
এর আগে আসন্ন আইপিএলের নিলামে এবার ৭৫ লাখ রুপি ভিত্তিমূল্য ধরা হয়েছিল তাসকিনের। বাংলাদেশ দলের আরেক পেসার শরীফুল ইসলামের ভিত্তিমূল্য ছিল ৫০ লাখ রুপি। কিন্তু বিসিবি আগেই বিসিসিআইকে জানিয়ে দেয়, দুজনের কাউকেই ছাড়বে না বিসিবি। এ নিয়ে তাসকিন বলেন, ‘বোর্ড আসলে ছাড়পত্র দিতে চায় না বিভিন্ন কারণে। খেলাও থাকে, স্বাস্থ্যের ইস্যু আছে। এবারও বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা বলেছে বিবেচনা করবে। কিন্তু অবশ্যই ভালো লাগে না এরকম ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো মিস করতে। সবারই খেলার ইচ্ছে, আমারও। একই রকম আশা নিয়ে আছি যে ভবিষ্যতে আবার হবে।’