একাদশে ভারসাম্য আনার জন্যই টি২০ ক্রিকেটে অলরাউন্ডার বেশি রাখার পরিকল্পনা থাকে টিম ম্যানেজমেন্টের। বাংলাদেশ দলকে এই স্বস্তি বহু বছর দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগে এতটাই পারদর্শী ছিলেন, একাদশে একজন বাড়তি ব্যাটার খেলানোর বিলাসিতা দেখাতে পারতেন কোচ। মাঠে তাঁর উপস্থিতিই প্রতিপক্ষ দলের ওপর প্রভাব ফেলত। সেই সাকিবকে টি২০ দলে আর দেখা যাবে না। বিশ্বকাপে শেষ আন্তর্জাতিক টি২০ খেলে ফেলেছেন তিনি।
বাঁহাতি এ অলরাউন্ডারের জায়গায় নেওয়া হয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজকে। অর্থাৎ টি২০তে মিরাজের নিরবচ্ছিন্ন পথচলা হয়তো শুরু হলো সাকিবের বিদায়ের মধ্য দিয়ে। সাবেক বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের শূন্যতা অফস্পিন অলরাউন্ডার মিরাজ কতটা পূরণ করতে পারবেন, এ নিয়ে আলোচনা আছে।
জাতীয় দল নির্বাচকরা মনে করেন, সাকিবের যথোপযুক্ত বিকল্প এই মুহূর্তে দেশে নেই। মিরাজকে দিয়ে মূলত অলরাউন্ডার কোটা পূরণ করা হচ্ছে। তিনিই হয়তো খেলতে খেলতে একদিন সাকিবকে ছুঁয়ে ফেলবেন। তবে এ মুহূর্তে মিরাজের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ পারফরম্যান্স দিয়ে নিজেকে সাকিবের মতো অটোচয়েস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। জাতীয় দল নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্ট যাতে স্বস্তিতে থাকতে পারে।
বাংলাদেশ দল সাকিবকে ছাড়া সম্প্রতি অনেক ক্রিকেট খেলেছে। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে নাজমুল হোসেন শান্তরা সব্যসাচী ক্রিকেটারকে ছাড়াই ঐতিহাসিক টি২০ জিতেছেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোম সিরিজেও ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে তাঁকে ছাড়া। সেদিক থেকে দেখলে সাকিব-উত্তর সময়ে একাদশ সাজাতে কঠিন হওয়ার কথা নয়।
৩৭ বছর বয়সী ক্রিকেটারকে ছাড়া খেলতে কেমন লাগবে– জানতে চাওয়া হলে ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে তাওহিদ হৃদয় বলেন, ‘অবশ্যই আমরা সাকিব ভাইকে মিস করব। কিন্তু এখান থেকে একদিন না একদিন সবাইকে যেতে হবে। আশা করি, আমরা সাকিব ভাইর শূন্যতা ভালোভাবে উতরে যেতে পারব।’
২০০৯ সাল থেকে অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে সাকিবের উত্থান। তিনি দ্রুতই হয়ে ওঠেন বৈশ্বিক তারকা। বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি টি২০ লিগে বাংলাদেশের মুখ ছিলেন তিনি। সেই সাকিবের জায়গা নেওয়া সহজ ব্যাপার নয়। আশা করা হচ্ছে, মহাতারকার ছায়ায় আড়াল পড়া ক্রিকেটাররা এবার গা-ঝাড়া দেবেন। খেলতে খেলতে সে তারকার উত্থান হবে বলে জানান হৃদয়। সাকিবের মতো তারকা হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন মিরাজ। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার, যাঁকে দেখেন সাকিবের বিকল্প হিসেবে, ‘মিরাজ অনেক উন্নতি করেছে। বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে ভালো করছে। সাকিবের শূন্যতা ওকে দিয়ে পূরণ করা সম্ভব হবে আশা করি।’
২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি২০ অভিষেক মিরাজের। গত সাত বছরে টেস্ট এবং ওয়ানডেতে নিয়মিত খেললেও টি২০ খেলার সুযোগ পেতেন কম। গত সাত বছরে মাত্র ২৫টি টি২০ ম্যাচ খেলেছেন এ স্পিন অলরাউন্ডার। এই সংস্করণে বড় কোনো পারফরম্যান্সও নেই তাঁর। সর্বোচ্চ ৪৬ রান, মোট রান ২৪৮। ১৩ উইকেট শিকার করা মিরাজ খেলার সুযোগ পাবেন তো আজ?
কানপুর টেস্ট চলাকালে ২৬ বছর বয়সী এ ক্রিকেটার বলেছিলেন, টেস্ট, ওয়ানডের মতো টি২০তেও প্রত্যাশা পূরণ করার চেষ্টা করবেন। ভারতের বিপক্ষেই খেলতে চান আত্মবিশ্বাস নিয়ে। হৃদয়ের মতে, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পারফর্ম করা ছাড়া আসলে কোনো কিছু চিন্তা করা যায় না। সবাই পারফর্ম করতে চায়, আমরা চেষ্টা করব সেরাটা খেলার।’
সুযোগ পেলে মিরাজও সেরাটা দিতে চান গোয়ালিয়রে। বাংলাদেশের বর্তমান দলে বেশির ভাগ সমবয়সী ক্রিকেটার থাকায় বোঝাপড়া ভালো। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও মেহেদী হাসান মিরাজ তো সেই বয়সভিত্তিক দল থেকে একসঙ্গে খেলছেন। নিজেদের বোঝাপড়া ভালো হওয়ায় মিরাজে ইতিবাচক পারফরম্যান্স দেখা গেলেও যেতে পারে।