চট্টগ্রামে অনুশীলনে মাথায় বল লেগে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে যেতে হয়েছিল মুস্তাফিজের। সেই চোটে মাথায় লেগেছে পাঁচটি সেলাইও। তাতে শঙ্কা জাগে এই চোট কি মাথার ভেতর অবদি পৌঁছেছে কিনা, সেই জন্য তাত্ক্ষণিক করা হয় সিটি স্ক্যান। যদিও সে সময় স্বতির খবরই দিয়েছিল চিকিত্সকরা। জানিয়েছিলেন ক্ষত হয়েছে শুধু বাহিরেই যা সেলাই দিয়ে দেওয়া হয়েছে ভেতরে কোনো রকম কিছু হয়নি।
তারপর চোটের পরবর্তী অবস্থা দেখতে ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা মুস্তাফিজকে। যা পরে বাড়িয়ে ৪৮ ঘণ্টায় পরিণত হয়। অবশেষে গতকাল হাসপাতাল থেকে তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। আর তা নিয়েই ফ্লাইটে করে ঢাকায় কুমিল্লার টিম হোটেলে চলে আসেন ফিজ। এক বার্তার মাধ্যমে তার দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের পক্ষ থেকে এমনটিই জানানো হয়। এছাড়া মাথার সেলাই কাটার আগ পর্যন্ত জনসমাগম এড়িয়ে চলতে মুস্তাফিজকে নির্দেশনা দিয়েছেন চিকিত্সক।
গতকাল চট্টগ্রাম পর্বের শেষ ম্যাচে টেবিল টপার রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল গেল দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। তাই দল ছাড়াই ঢাকায় ফিরতে হয়েছে মুস্তাফিজকে। মুস্তাফিজের হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার বিষয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল দলের ফিজিও এস এম জাহিদুল ইসলাম সজল জানান, ‘গতকাল রাতে মুস্তাফিজুর রহমানের দ্বিতীয় সিটি স্ক্যান করানো হয়। এরপর নিউরোসার্জন ও বিসিবির সঙ্গে পরামর্শ করা হয়। বিমান ভ্রমণের ছাড়পত্র পাওয়ার পর তাকে ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল থেকে ঢাকায় টিম হোটেলে পাঠানো হয়েছে। তার ক্ষত এখন পরিষ্কার এবং সেরে ওঠার পথে। আগামী তিন দিন (ক্ষত জায়গায়) ড্রেসিং করব আমরা। এরপর আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি নিউরোসার্জনের পরামর্শ নেওয়া হবে।’
এদিকে চট্টগ্রামের অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে মুস্তাফিজের ওপর পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করা নিউরোসার্জন ডা. মইনউদ্দিন মাহমুদ ইলিয়াস মঙ্গলবার গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘যে কোনো মাথার চোট.. যে অবস্থায় আমরা মুস্তাফিজকে পেয়েছি.. এটা সারতে সময় লাগে সর্বনিম্ন ৭ থেকে ১৪ দিন। কারণ সেলাইর ওপর নির্ভর করে যে এটা কখন কাটব। সাধারণত ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে সেলাই কাটা যায়।’ এ সময় চিকিত্সকের কাছে জানতে চাওয়া হয় মাঠে নামার মতো ফিট হওয়ার জন্য কতদিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে এটা নির্ভর করে তার ফিজিক্যাল কন্ডিশন, স্ট্যাবিলিটির ওপর। তিনি মাথায় যে চোটটা পেয়েছে তা সারতে লাগে ৭ থেকে ১৪ দিন।’ অর্থাত্ বলা যায় চলমান বিপিএলে মুস্তাফিজকে মাঠে বোলিং করতে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা আর নেই।
তবে যদি কাটার মাস্টার নিজে বোধ করেন যে তিনি মাঠে খেলতে পারবেন তাহলে শেষ দিকে (যদি ফাইনালে ওঠে কুমিল্লা) তাহলে তাকে মাঠে দেখা যেতে পারে। মুস্তাফিজের বর্তমান শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে চিকিত্সক আরো বলেন, ‘তিনি এখন উন্নতির দিকে রয়েছে এবং শঙ্কা মুক্ত। এখন বাসায় হোক কিংবা হাসপাতালে হোক লোকসমাগম এড়িয়া চলাই তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কেননা যত লোকসমাগমে প্রবেশ করবে তত ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে। তাই আমরা তাকে সেলাই কাটার আগ অবদি এসব স্থান এড়িয়ে চলতে বলেছি। যা তাকে ন্যূনতম ৭ দিন মেনে চলতে হবে।’
এর আগে গেল রবিবার সকালে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুশীলনের সময় মুস্তাফিজের মাথায় বলের আঘাত লাগে। নেটে একটি ডেলিভারি করার পর বোলিং মার্কে ফিরে ঘুরে তাকালে অন্য পাশের নেট থেকে উড়ে আসা বল আঘাত করে মুস্তাফিজের মাথার বাম পাশে পেছন দিকে। সঙ্গে সঙ্গেই তার মাথা থেকে রক্ত ঝরতে দেখা যায়। সে সময় মাঠে প্রাথমিক সেবা দিয়ে মুস্তাফিজকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। পরে মাথায় ৫টি সেলাই করা হয়। স্ক্যানে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ ধরা পড়েনি। তবে সতর্কতা হিসেবে পর্যবেক্ষণে রাখা হয় তাকে। যার জন্য তাকে ৪৮ ঘণ্টা হাসপাতালে কাটাতে হয়।