পাঁচতারকা হোটেলের ছোট্ট রুমে সংবাদকর্মীদের উপচে পড়া ভিড়। সেই ভিড়ের মধ্যে ডায়াসে উঠে পরিচিতজনদের সঙ্গে হাই-হ্যালো যেমন করেছেন, তেমনি করে মন খুলে কথা বলেছেন তাবিথ আওয়াল। ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে চলা সংবাদ সম্মেলনে করা প্রশ্নের উত্তরগুলো একজন পাক্কা রাজনীতিবিদের মতো দিয়েছেন। কিন্তু গতকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় এ নেতা কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দেননি।
ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা, ফুটবলকে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখা তাবিথ আওয়াল হতে চান দেশের ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেতা। রাজনীতিকে ক্রীড়ানীতির সঙ্গে না মিলিয়ে সাবেক ফুটবলার ও সংগঠক হিসেবে নিজেকে নিয়ে যেতে চান আরও উচ্চতায়। স্বতন্ত্র থেকে ২০১২ ও ২০১৬; দুই মেয়াদে সহসভাপতি পদে নির্বাচিত হওয়া ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচনে সভাপতি পদে লড়াইয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন সোমবার, ‘আমি বিগত তিনটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম।
চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে নির্বাচনের লড়াইয়ে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অফিসিয়ালি আরেকটি বিষয় পরিষ্কার করছি, সভাপতি পদে নির্বাচন করব। আমি আশাবাদী এই পদে নির্বাচনে লড়লে জিতব এবং জিতলে আমি ফুটবলের ধারাবাহিকতা আরও সামনের দিকে নিয়ে যেতে পারব।’
কাজী সালাউদ্দিন নির্বাচন না করার সিদ্ধান্তে তাবিথকেই ধরে নেওয়া হয়েছিল বাফুফের পরবর্তী সভাপতি প্রার্থী। কিন্তু ব্যবসায়ী ও সংগঠক তরফদার রুহুল আমিনের লড়াইয়ে নামা এবং তাঁকে বিএনপির ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক ফুটবলার আমিনুল হকের সমর্থন দেওয়ায় সৃষ্টি হয় ধূম্রজাল। একই দল ও মতাদর্শের হয়েও তাবিথের জায়গায় তরফদারকে আমিনুলের সমর্থন জানানো নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। তাবিথ উত্তর দিয়েছেন কূটনৈতিকভাবে ‘আমি বিএনপির পক্ষ থেকে মনোনয়ন নিয়ে দুইবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে লড়েছিলাম।
একই সঙ্গে আমি কিন্তু ২০১২ সাল থেকে বাফুফে নির্বাচন করছি এবং লড়ছি। আমার মনে হয়, বিগত দিনগুলোতে দেখা যাবে না আমার রাজনীতি ও ক্রীড়ানীতি কোনো সময়ে স্বার্থ-সাংঘর্ষিক করতে দিয়েছি। আমি দেখেছি, কিছু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সদস্য হয়তো আরেক ব্যক্তিকে সাপোর্ট দিতে পারেন। সেই জায়গাতে তো আমরাও চাচ্ছি।
আমরা বারবার বলছি, নির্বাচনটা যেন উন্মুক্ত হয়। এখানে কিন্তু দলের পরিচয়, ধর্মের পরিচয়, জাতের পরিচয় মুখ্য না। যে ব্যক্তিকে আপনি মনে করেন ফুটবলের জন্য ভালো হতে পারে, আপনারা সেই ব্যক্তিকেই সাপোর্ট দেবেন। আশা করি, ভোটাররা সিদ্ধান্ত দেবে কোন ব্যক্তি দায়িত্ব গ্রহণ করবে। আমিনুল হককে যদি আপনি আমার মতো একটা দলের ভেতরে বন্দি করে রাখেন, সেটাও শোচনীয় হবে বলে আমি মনে করি না।
আমিনুল হক জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ছিলেন। এখন কে কোন পরিচয় দিয়ে কাকে সাপোর্ট করছে, এটা আমি মনে করি তাদের ব্যক্তিগত জায়গাতে সীমিত রাখা ভালো। শুধু ক্রীড়াবিদ হিসেবে আমি আগামীতে ফুটবল ফেডারেশনে নির্বাচন করতে যাচ্ছি।’
এখন পর্যন্ত সভাপতি পদে তাবিথের প্রতিদ্বন্দ্বী তরফদার। ফুটবলপাড়ায় গুঞ্জন আছে, অক্টোবরে তফসিল ঘোষণার পর হয়তো ঐকমত্যের প্যানেল হতে পারে। এসব বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি এবং তিনি কী কোনো প্যানেল দাঁড় করাবেন কিনা, সেটাও সময়ের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন সাবেক এ ফুটবলার, ‘আজকে (সোমবার) শুধু আমার নির্বাচন করার আগ্রহটা জানালাম।
আমাদের ইশতেহার কী হতে পারে বা ভবিষ্যতে পরিকল্পনা কী হতে পারে; কারা কারা ডেলিগেট হবে সেই প্রক্রিয়া এখন চলছে। ডেলিগেট হওয়ার পরের প্রক্রিয়া হলো কারা কারা নির্বাচন করতে আগ্রহী। নির্বাচনে যখন আমরা বুঝব কারা কারা আগ্রহী, তখন চিন্তা করা যাবে একটা প্যানেল হবে নাকি আংশিক প্যানেল হবে, নাকি কোনো প্যানেলই হবে না। সেই জায়গাগুলোতে আমি এখন কোনো বক্তব্য রাখতে পারছি না।’
যে প্যানেলই হোক বা না হোক, তাবিথ চান ভোটের লড়াইয়ে সভাপতির চেয়ার বসতে, ‘যারা মনে করেন, তারা এই পদের (সভাপতি) জন্য যোগ্য, আমি ওয়েলকাম জানাই সবাই যেন নির্বাচনে দাঁড়ায়। কম্পিটিশনের মাধ্যমে সবচেয়ে ভালো নেতা এবং লিডার তৈরি হতে পারে।
কম্পিটিশনবিহীন একজন, দু’জন যতই নিজেকে ভালো মনে করুক এটার কোনো ক্রেডিট বা ক্রেডিটাবিলি আসেনা। আমি চাইব, একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে আসা। যদি আমি হতে পারি, তাহলে বুঝব ক্রীড়াঙ্গনের ম্যান্ডেট আমার ওপরে আছে। ক্রীড়াঙ্গনের সাপোর্ট আমার ওপর আছে। আর আমি নির্বাচিত হলে খেলার মাঠে চমক দেখাব।’