শেষের বাঁশি তাঁর বেজে গিয়েছিল আগেই। ২০২২ সালের টি২০ বিশ্বকাপে খেলতে পারেননি। সেই মাহমুদউল্লাহই পুনর্জীবন পেলেন আফিফ হোসেন, শামীম পাটোয়ারিরা ব্যর্থ হওয়ায়। একজন ফিনিশার হিসেবে দলে জায়গা হলো ৩৮ বছর বয়সী ক্রিকেটারের। ডালাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের ম্যাচে দেখালেন ধৈর্যের পরীক্ষা। বুড়ো হাড়ের ভেল্কিতে জেতা হলো ম্যাচ। সেই মাহমুদউল্লাহ হঠাৎ করে বিদায় বলে দেবেন, তা ভাবা যায়নি।
জাতীয় দল নির্বাচকরাও সাত নম্বর পজিশনে ভালো বিকল্প খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চেয়েছিলেন। তাই চাইলে টেনেটুনে আরও কিছুদিন টি২০ খেলে যেতে পারতেন মিডল অর্ডার এ ব্যাটার। কিন্তু লক্ষ্যহীন যাত্রায় সময় নষ্ট করতে চাননি। তাই দেশে থাকতেই মনস্থির করে ফেলেন, ভারত সফর দিয়েই শেষ করবেন। ভারতের বিপক্ষে ১২ অক্টোবর শেষ ম্যাচ খেলে টি২০-এর জার্সিটা তুলে রাখবেন মাহমুদউল্লাহ।
আন্তর্জাতিক টি২০তে মাহমুদউল্লাহর সেরা সময় গেছে ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত। তাঁর খেলা বেশির ভাগ বড় ইনিংসগুলো এই ছয় বছরে। বিশেষ করে ২০১৬ সালের এশিয়া কাপ, টি২০ বিশ্বকাপ ও ২০১৮ সালের নিদাহাস ট্রফিতে বাজিমাত করেছেন। মিডল অর্ডার এ ব্যাটারের ঝোড়ো ৪৩ রানেই স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনালে উন্নীত হতে পেরেছিল বাংলাদেশ। ১৮ বলে তিন চার ও দুই ছক্কায় ২৩৮.৮৮ স্ট্রাইক রেটে হার না মানা সে ইনিংসটি ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা মনে করেন তিনি।
তাঁর মতে, ‘ওই ইনিংসটি অন্যতম সেরা বলতে পারেন। ফাইনালের আগের ম্যাচে খেলেছিলাম। মনে রাখার মতো একটি ইনিংস ছিল সেটি।’ নিদাহাস ট্রফিতে যেমন ভালো স্মৃতি আছে, তেমনি ষোলোর বিশ্বকাপের হতাশার স্মৃতি আজও তাড়ায় তাঁকে, ‘সবচেয়ে হতাশাজনক ছিল, বেঙ্গালুরুতে ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচ জেতাতে না পারা।
২০১৬ সালের সেই ম্যাচই আমার জীবনের অন্যতম হতাশাজনক, লাইফ চেঞ্জিং মোমেন্ট। সেখান থেকে বড় শিক্ষা নিয়েছিলাম।’
২০০৭ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক টি২০ অভিষেক মাহমুদউল্লাহর। প্রথম আট বছর তেমন ভালো করতে পারছিলেন না। নিজেকে ভেঙেচুরে নতুন করে গড়ে তোলার ইচ্ছা জাগে খুলনার এক ক্যাম্পে। বিদায়-লগ্নে বললেন পেছনের কথা, ‘২০১৬ সালের আগে এই ফরম্যাটে আমার গড় ও স্ট্রাইক রেট আহামরি ভালো ছিল না। ২০১৬ সালের বিশ্বকাপ ছিল ভারতে। এখানে আসার আগে খুলনায় একটি প্র্যাকটিস ক্যাম্প করি।
সেই ক্যাম্প থেকে আমি ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ পাল্টানোর চেষ্টা করি। ৬ বা ৭ নম্বরে নামতাম, ওই জায়গায় ব্যাট করতে আমাকে অ্যাপ্রোচ ও স্টাইল বদলাতে হয়েছে। তখন থেকে ফিনিশারের ভূমিকা পালন করেছি। তবে এই জায়গাটা খুব কঠিন। কখনও কখনও ব্যর্থ হবেন। মানুষ সেগুলোই বেশি মনে রাখবে। এটাই ক্রিকেটের অংশ।’
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে টি২০ দলের সাবেক এ অধিনায়ক জানান, পেছনে তাকিয়ে কোনো আক্ষেপ হচ্ছে না তাঁর, ‘আমার কোনো আক্ষেপ নেই। কারণ আমি বাংলাদেশের হয়ে অনেক বছর খেলেছি। সম্ভবত ১৭ বছর খেলেছি। জানি না, কতটুকু ভালো করতে পেরেছি। তবে আমি আমার সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’
মাহমুদউল্লাহর টি২০ ক্যারিয়ার সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে সম্পর্কিত। জুয়াড়ির তথ্য গোপন করে সাকিব ২০১৯ সালে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হলে ভারত সফরে মাহমুদউল্লাহকে টি২০ দলের অধিনায়ক করা হয়। সেই থেকে টানা তিন বছর নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশ দলকে। সাফল্য-ব্যর্থতা মিলিয়ে মন্দ ছিল না তাঁর নেতৃত্বের সময়টুকু। সে কারণেই হয়তো কিছুটা তৃপ্তি নিয়ে বিদায় নিতে পারছেন তিনি। পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ২০২৬ সালের টি২০ বিশ্বকাপের জন্য দল গড়তে সুযোগ করে দিতেই ভারতে শেষ বলে দেওয়া মাহমুদউল্লাহর।