বিশ্বকাপ থেকে দলের বিদায় নিশ্চিত হওয়ার পরই ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ডেভিড ওয়ার্নারকে বিদায়ের বার্তা দিয়েছিল ধন্যবাদ জানিয়ে। ওই বার্তা থেকেই অসি ওপেনার বুঝে গেছেন শেষের বাঁশি বেজে গেছে। গতকাল আফগানিস্তানের কাছে হারের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ।
বিসিবি চাইলে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার মতো টাইগার ক্রিকেট ডটকমেও সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ধন্যবাদ জানাতে পারে। লম্বা সময় ধরে দেশের ক্রিকেটকে ‘সার্ভিস’ দেওয়ায় কৃতজ্ঞতাস্বরূপ খোলা মানপত্রও দেওয়া যেতে পারে। জাতীয় দল থেকে বাদ দিয়ে বিদায় বার্তা দেওয়ার চেয়ে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উভয় পক্ষের জন্যই স্বস্তির। বিষয়টি নিয়ে বিসিবি কর্তারা এভাবে ভাবছেন কিনা– জানতে চেয়ে একাধিক পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে কেউ কেউ পরোক্ষে বোঝাতে চেষ্টা করেন, সাকিবের শেষ না হলেও মাহমুদউল্লাহর ফেয়ারওয়েল হয়ে গেছে।
ব্যবসা ও রাজনীতির ফাঁকে ক্রিকেটটা মোটামুটি চালিয়ে নিচ্ছেন সাকিব। কারণ তিনি বুঝে গেছেন নানা ব্যস্ততায় খেলায় মনোযোগ রাখা কঠিন। সবকিছু মিলিয়ে বিশ্বকাপের শুরু থেকে ক্লান্তও ছিলেন তিনি। যেটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে তাঁর পারফরম্যান্সেও। বিসিবির একজন কর্মকর্তার কাছে সাকিবের এই হাল নিয়ে জানতে চাওয়া হলে, তাঁর উত্তর ছিল– ‘বড় স্যারকে নিয়ে কিছু বলা যাবে না।’ দেশের ক্রিকেটে সাকিবের অবদান এত বেশি যে, তাঁকে নিয়ে কেউ কিছু বলার সাহস করেন না।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর অটোচয়েস হয়ে ওঠা মাহমুদউল্লাহ নিজের অষ্টম টি২০ বিশ্বকাপ মিশন শেষ করলেন বাজেভাবে। এখানেই তাঁর টি২০ ক্যারিয়ার শেষ ভাবা হলেও মাহমুদউল্লাহ নিজে ভাবছেন কিনা, জানা নেই। তারা না ভাবলেও সমর্থকরা ভেবে নিয়েছেন ঠিকই। এ নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়ও বইছে। বিশ্বকাপের আগে যারা মাহমুদউল্লাহর সমর্থক বনে গিয়েছিলেন, গতকালের পর ডুব দিয়েছেন তারাও। এই বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচ খেলে ১১১ রান ও তিন উইকেট সাকিবের। যেটা দেশসেরা ক্রিকেটারের ফুরিয়ে যাওয়ার বার্তা মনে করেছেন সমর্থকরা।
চোখের সমস্যা নিয়ে ১০৬.৭৩ স্ট্রাইক রেটে সাকিব ব্যাট করতে পারলেও অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ ছিলেন ম্লান। সাত ম্যাচে ১১১ বল থেকে ৯৫ রান তাঁর। স্ট্রাইক রেট ৯৪.০৫। ‘অটোচয়েস’ মাহমুদউল্লাহর এই পারফরম্যান্স দেখার পর বিসিবি পরিচালকরাও কপাল চাপড়াচ্ছেন। একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দেড়শ স্ট্রাইক রেট না থাকলে টি২০ খেলা উচিত না। আমার মনে হয় সাকিব-মাহমুদউল্লাহর জায়গায় দুইজন নতুন ক্রিকেটারকে নেওয়া হলে এত খারাপ করত না।’
বিশ্বকাপের বেশির ভাগ সময় সাকিব এবং মাহমুদউল্লাহকে লুকিয়ে রাখতে হয়েছে অধিনায়ক শান্তকে। ডালাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি বাদ দিলে টুর্নামেন্টের বাকি ছয় ম্যাচে মিডল অর্ডার এ ব্যাটারের অবদান সামান্য। সাকিবকে এভাবে লুকিয়ে থাকতে আগে কখনও দেখা যায়নি। নিউইয়র্কের দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাত্র এক ওভার বল করেছেন তিনি। ৪৭ উইকেট নিয়ে নবম বিশ্বকাপ শুরু করা সাকিবের পঞ্চাশ ছুঁতে লেগেছে ছয় ম্যাচ।
বোলিং ইকোনমি ভালো থাকলেও মনে রাখার মতো কোনো স্পেল করতে পারেননি। টুর্নামেন্টে সাকিবের অবদান বলতে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হার না মানা ৬৪ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলা। মাহমুদউল্লাহর সেখানে মনে রাখার মতো কোনো স্মৃতি থাকল না শেষের বিশ্বকাপে। অথচ আশা করা হচ্ছিল, এ দুই সিনিয়র ক্রিকেটার বিদায়ী বিশ্বকাপ রাঙাবেন পারফরম্যান্স দিয়ে।