আসিফ রেজা, সোনারগাঁ(নারায়ণগঞ্জ) : নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁয়ে বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ বেড়ে যাচ্ছে ডেঙ্গুর আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ গতদুইমাসে প্রায় ৮৬ জনের বেশি।অপরিষ্কার অসচেতনতার জন্য বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত।মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় পরিত্যক্ত বনবিভাগ, অপ্রয়োজনীয় নানান গাছে বন জঙ্গলে আশেপাশের বাড়িতে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত সংখ্যা।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী তারিকুর রহমান মুন্না জানান, আমার বাসা মোগরাপাড়া চৌরাস্তা সরকারি বন বিভাগের পাশে। দুই বছর যাবত বন বিভাগটি বন জঙ্গল আজেবাজে গাছ ও ময়লায় পরিপূর্ণ। তার পাশেই রয়েছে আরেকটি ময়লার বিরাট বাঘার। সাপ,বিচ্ছু,মশা অনেক পোকামাকড় বেড়ে গেছে। আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা এক বছর আগেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিলাম।এবার আমি সহ আমার পরিবারের চারজন ডেঙ্গু আক্রান্ত। আমার বাসার ভাড়াটিয়া ও আশেপাশের কয়েকটি পরিবার মিলে ১০ থেকে ১২ জন ডেঙ্গু তে আক্রান্ত। একজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।আমার স্ত্রী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে অল্পর জন্য আল্লাহর রহমতে বেঁচে আসছে। আমার বাসা আমি কয়েকবার পরিষ্কার করেছি এবং পরিষ্কার রাখি যাতে মশার জন্ম না হয়। অপরিষ্কার ময়লা বন বিভাগের জন্য প্রচুর মশা আসে। বন বিভাগ ও ময়লার বাগানের মশার কামড়ে তিলে তিলে আজ আমরা মৃত্যুর পথে।দ্রুত বন বিভাগ ও ময়লা বাগার পরিষ্কারের মাধ্যমে আমাদের স্বাভাবিক জীবন চাই আমরা বাঁচতে চাই।
এলাকাবাসীর তথ্যে ও সরাসরি বন বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, অপরিচ্ছন্ন পরিত্যক্ত বনবিভাগ, নানান গাছে বন জঙ্গল হয়ে আছে।বন বিভাগের ভিতরের বাড়িতে নেই মানুষ।পরিত্যক্ত বাড়িতে হচ্ছে নেশা ও মাদক কারবার।জমির উপরে অপ্রয়োজনীয় করা হয়েছে ব্রিজ। সাপ, বিচ্ছু, মশা, পোকামাকরের বাগান হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মমিন জানান, কিছুদিন আগে আমরা এই জঙ্গল কাটিয়েছি।বর্ষা মৌসুম এখন আবার জঙ্গল হয়ে গেছে। এইখানে শুধু মশা নয়, রাসেল বাইপার সাপ সহ মারাত্মক পোকামাকড় থাকতে পারে। আমরা আবার দ্রুত এই বন বিভাগের পরিস্কার করার কাজ করব। বন বিভাগের বাড়িগুলোতে আগে আজেবাজে লোকদের উৎপাত ছিল অনেক। মাঝে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ধরার পর এখন আগের মত নাই অনেক কমে গেছে। শুকনো মাটির উপর ব্রিজ আমি করিনি আমার আগের বন কর্মকর্তা জড়িত।
সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসাধীন অবস্থায় মো: শফিকুল ইসলাম জানান,আমি প্রাণ কোম্পানিতে চাকরি করি। হঠাৎ করে আমার ঠান্ডা ও জ্বর কিছুদিন হয়ে গেল কিন্তু কমতেছে না তাই দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসলাম।পাঁচদিন ওষুধ খাওয়ার পর ডেঙ্গু পরীক্ষা করি এবং ডেঙ্গু ধরা পড়ে।হসপিটালে ভর্তি হয়ে আমি চিকিৎসা নিচ্ছি আমার জন্য দোয়া করবেন।
ডেঙ্গু জ্বর হচ্ছে একটি মশা-বাহিত ভাইরাস রোগ।প্রথমবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের বিশেষ কোন উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা যায় না। চিকিৎসকদের মতে কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এই রোগের প্রভাব অনেক গভীর হয়ে থাকে।উচ্চ জ্বর, শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা,বমি,মাথা ঘোরানো,গ্রন্থি ফুলে যাওয়া,ত্বকে বিভিন্ন স্থানে ফুসকুড়ি,অনিয়ন্ত্রিত পায়খানা,প্রস্রাবে এবং মলের সাথে রক্তপাত। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্লেটলেট এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার থেকে চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার প্লেটলেট মাইক্রোলিটার রক্তে থাকে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে বিশ হাজার এর নিচে চলে আসতে পারে।এতে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য ও প: প: কর্মকর্তা ডাক্তার সাবরিনা হক জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গুর আক্রান্ত সংখ্যা বাড়ছে।পরিষ্কার ও সচেতনতার বিকল্প নেই। কোথাও পানি জমে থাকা গাছের টপে পানি জমে থাকা গাছ পরিষ্কার রাখতে হবে। বাড়ির আঙ্গিনা ও ময়লা পরিষ্কার রাখা। জ্বর, মাথা ব্যাথা, শরীর ব্যথা এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।