বাংলাদেশ সহজেই সিরিজ জিতবে তা ময়দানি লড়াইয়ের আগেই বোঝা গেছে। শুধু যেন আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাট-বলের প্রতিযোগিতাটাই বাকি ছিল। সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টানা চার ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। তবে দুর্বলতর দলটি সর্বশেষ দুই ম্যাচে দুর্দান্ত লড়াই করেছে এবং স্বাগতিক বাংলাদেশকে জয় পেতে হিমশিম খেতে হয়েছে।
৫ ম্যাচের টি২০ সিরিজের আজ পঞ্চম ও শেষ ম্যাচ মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সকাল ১০টায়। সাধারণত এই সময়টাতে টি২০ ম্যাচ খেলা হয় না। কিন্তু আসন্ন টি২০ বিশ^কাপের ম্যাচগুলো স্থানীয় সময় অনুসারে সকালে অনুষ্ঠিত হবে। তাই আজকের ম্যাচটি বাংলাদেশ খেলতে নামবে সকাল ১০টায়। এ ম্যাচ জিতলেই ৫-০ ব্যবধানে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করবে বাংলাদেশ।
কিন্তু সিরিজ ফলাফলের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে গত চার ম্যাচে দলগতভাবে যে ভুলগুলো হয়েছে তা যতটা সম্ভব শুধরে নেওয়া। কারণ এই সিরিজ শেষ করে ১৫ মে যুক্তরাষ্ট্রে বিশ^কাপ খেলার জন্য রওনা হওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশ দলের। অপরদিকে টানা হারের পর আজ জিতেই সিরিজ শেষ করতে চায় জিম্বাবুয়ে।
বিশ^কাপে এবার অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা ড্রপ-ইন পিচ স্থাপন করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।
সেখানেই হবে বিশ^কাপের ম্যাচ। এ ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটও ব্যাটিং স্বর্গ হবে না। তাই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে খেলেনি বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের উইকেটে সাধারণত প্রচুর রান হলেও এবার তা দেখা যায়নি। বরং সিরিজের প্রথম ৩ ম্যাচে ব্যাটারদের জন্য রান করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়েছে। যদিও দেখেশুনে খেললে সেই উইকেটেও বড় সংগ্রহ করা যায়। সফরকারী দল হিসেবে জিম্বাবুয়ে তা একেবারেই পারেনি। ৩ ম্যাচেই প্রথম ৫টি উইকেট তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে হারিয়েছে।
লেট অর্ডারদের দৃঢ়তায় সম্মানজনক পুঁজি পেয়েছে। এরপর বাংলাদেশের টপঅর্ডাররাও তেমন ভালো করতে পারেননি এবং স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে পারেননি। কিন্তু শুরুতে বোলারদের সহায়তা দিলেও পরের দিকে ব্যাটাররা দ্রুত রান করতে পেরেছেন। উইকেটের এই চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটাররা। এরপরও তৃতীয় ম্যাচে তীব্র লড়াই করে মাত্র ৯ রানে হেরেছে। মিরপুরে সিরিজের চতুর্থ টি২০ ম্যাচে কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা গেছে।
এখানে শুরুর দিকে ব্যাটিংয়ের জন্য উইকেট সহায়ক আচরণ করেছে। এ বিষয়ে সৌম্য সরকার বলেছেন, ‘প্রথম দিকে আমি আর তামিম যখন ব্যাট করছিলাম নতুন বলে একটু ভালো ছিল। বলটা ব্যাটে আসছিল। হঠাৎ বলটা একটু পুরনো হওয়ার পর একটু দ্বিমুখী পেস হয়েছে, একটু বল ওঠা-নামা করছিল।’ আর সেজন্যই ১১ ওভারে বিনা উইকেটে ১০০ রান করা বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ১৪৩ রানে গুটিয়ে গেছে। শেষ ওভার পর্যন্ত লড়াই করে মাত্র ৫ রানে হারে জিম্বাবুয়ে।
আগের চারটি ম্যাচ থেকে উভয় দলের ব্যাটারদের ব্যর্থতাটাই ফুটে উঠেছে। ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত ব্যাটারদের পারফর্ম্যান্সে কোনো সামঞ্জস্যতা দেখা যায়নি। এবার দুই দলেরই লক্ষ্য শেষ ম্যাচে এ বিষয়টিতে উন্নতি আনা। বিশ^কাপের আগে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। কিন্তু তা হবে শুধু সেখানে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে ওঠার পরীক্ষা।
তার আগে আজ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অনেক ধরনের উন্নতির দিকে দৃষ্টি বাংলাদেশ দলের। ব্যাটিংয়ে সামঞ্জস্যতা আনা, ফিল্ডিংয়ে উন্নতি ঘটানো এবং বোলিংয়ে ডেথ ওভারে নিয়ন্ত্রণ খুঁজে পাওয়া। চতুর্থ ম্যাচে অবশ্য মুস্তাফিজুর রহমান থাকাতে এবং তাসকিন আহমেদ বেশ মিতব্যয়িতা দেখাতে পেরেছেন শেষদিকে। কিন্তু অন্য ৩ ম্যাচে সেটি পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। এই দুর্বলতাগুলো বিশ^কাপের আগে খুঁজে পাওয়া গেছে।
তাই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ খেলে এই প্রয়োজনীয় বিষয়টি খোলাসা হয়েছে। নিজেদের দুর্বল দিকগুলো পরিষ্কার হয়েছে। আজ থেকে সেই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জ। আজ একাদশে নিশ্চিতভাবেই তাই কয়েকটি পরিবর্তন দেখা যাবে। আবার ফিরতে পারেন লিটন এবং জাকের আলীকে বসিয়ে মিডলঅর্ডারে ব্যাটিং করানো হতে পারে তাকে। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, শেখ মেহেদি হাসানকে শেষবারের মতো ঝালিয়ে নেওয়া হতে পারে।
২০১৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৪ ম্যাচের টি২০ সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। সেবার ২-২ সমতায় সিরিজ শেষ হয়। সিরিজে ৬ জন খেলোয়াড়কে অভিষেক ক্যাপ দেওয়া হয়। এবার ৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে প্রথমবার কোনো দলের বিপক্ষে ৫-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের সুযোগ নাজমুল হোসেন শান্তদের। কিন্তু নিজেদের ব্যাটিং বিপর্যয় কাটানো এবং বিশেষ করে শান্ত ও লিটনের রানে ফেরাটাই হবে বড় স্বস্তির কারণ। জিম্বাবুয়ে ব্যাটে-বলে কিছু বিচ্ছিন্ন লড়াই করতে পারলেও দলগতভাবে সামগ্রিক পারফর্ম্যান্স দেখানোর ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। শেষ ম্যাচে সেটি কাটিয়ে উঠতে অন্তত একটি জয় নিয়ে দেশে ফিরতে চায় তারা।