গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা সংকটে ভুগছেন সাধারণ মানুষ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা না পেয়ে তারা বাধ্য হয়ে বেসরকারি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। অনেকে ধারদেনা করে ওষুধ কিনে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
রোগীরা অভিযোগ করেছেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হতে চাইলে চিকিৎসকেরা দূর থেকে দেখে শুধু প্রেসক্রিপশন দিয়ে পাঠিয়ে দেন। সরকারি হাসপাতাল থেকে কোনো ওষুধ দেওয়া হয়নি। ফলে তারা বাধ্য হয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ওষুধ কিনে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
মোজাফফর আলী বলেন, “চোখের উন্নত চিকিৎসার দরকার। কিন্তু এরই মধ্যে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। ধার ছাড়া আর উপায় নেই।”
আরেক রোগী শফিউল ইসলাম জানান, “দুই হাতে ফোসকা এখনো ভালো হয়নি। ইতিমধ্যে সাড়ে আট হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন ওষুধ কিনব না সুদের টাকা শোধ করব—বুঝতে পারছি না।”
দিনমজুর গোলজার মিয়া বলেন, “চিকিৎসার পেছনে ৯ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। প্রতিদিন ওষুধ কিনতে হচ্ছে, সংসার চালানোই এখন কঠিন।”
এরই মধ্যে পাশের পশ্চিম বেলকা গ্রামের রোজিনা বেগম অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-এ ভর্তি হয়ে মারা গেছেন। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই নারীর মৃত্যু অ্যানথ্রাক্সে নয়, অন্যান্য জটিলতায় হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দিবাকর বসাক বলেন, “রোগীদের অবস্থা গুরুতর ছিল না। তাই ভর্তি না করে চিকিৎসা দিয়ে পাঠানো হয়েছে।”
এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, সঠিক চিকিৎসা ও ওষুধ না পেলে এ রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তাই দ্রুত সরকারি উদ্যোগে চিকিৎসা সহায়তা ও নজরদারির দাবি জানিয়েছেন তারা।
উল্লেখ্য, গত ২৭ আগস্ট সুন্দরগঞ্জের বেলকা ইউনিয়নের কিশামত সদর গ্রামে একটি অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গরু জবাই করার পর ১১ জনের শরীরে ফোসকা পড়ে এবং উপসর্গ দেখা দেয়। আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন মোজাফফর আলী, মোজাহার আলী, শফিউল ইসলাম, গোলজার মিয়া, খতিব মিয়া, হাসান আলী, নুরুন্নবী মিয়া, ফরিদুল মিয়া, মারুফ মিয়া, কুদ্দুস মিয়া ও মিঠু মিয়া। তাদের মধ্যে মোজাফফর আলীর বাঁ চোখে দৃষ্টিশক্তি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।