বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক অনন্য নাম এস এ হক অলিক পরিচালিত ছবি ‘হৃদয়ের কথা’। রিয়াজ-পূর্ণিমা অভিনীত এ সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০০৬ সালের ১৮ আগস্ট। প্রেমকাহিনিভিত্তিক এই ছবিটি মুক্তির পরই সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। শুধু গল্প বা অভিনয় নয়, ছবির গানগুলোও দর্শক-শ্রোতাদের মনে গেঁথে যায়।
মুক্তির আগে বাজারে আসে সিনেমার অডিও অ্যালবাম, যা তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বাড়তি আগ্রহ সৃষ্টি করে। এর মধ্যে হাবিব ওয়াহিদের কণ্ঠে ‘ভালোবাসবো বাসবোরে বন্ধু’ এবং এস আই টুটুলের কণ্ঠে ‘যায় দিন যায় একাকী’ গান দুটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
বিশেষ করে ‘ভালোবাসবো বাসবোরে বন্ধু’ গানটি ছিল হাবিব ওয়াহিদের প্রথম চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক। জুয়েল মাহমুদের লেখা এ গানের জন্যই হাবিব প্রথমবার মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে সম্মাননা পান।
সম্প্রতি প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হাবিব জানান, গানটিকে তিনি নিজের সংগীত ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট মনে করেন। সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন—
“তাঁদের অভিব্যক্তি দেখে মনে হয়েছিল, তাঁরা এমন ভালো আশাও করেননি। আমার আগের অ্যালবামগুলো শুনেই হয়তো প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু এ গান শুনে তাঁদের এক্সপেক্টেশন ছাপিয়ে গিয়েছিল।”
গানটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি আবেগঘন স্মৃতিও। কক্সবাজার থেকে ফেরার পথে গাড়িতে বসে প্রথমবার গানটি শোনান তিনি তাঁর বাবা কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদকে। গানটি প্রথমবার বাজানোর পরই হাবিব ওয়াহিদ ঘুমিয়ে যান। তাঁর ঘুম ভাঙার পর বাবা ফেরদৌস ওয়াহিদের কাছে জানতে চান, কেমন লেগেছে গানটি।গান শুনে বাবার প্রতিক্রিয়া আজও হাবিবকে শিহরিত করে— “হাবিব, তুমি এটা কী বানালে? আমি তো টানা ২৮ বার শুনলাম।”
১৯ বছর পেরোলেও গানটির জনপ্রিয়তা কমেনি। ইউটিউবে ‘অনুপম মুভি সং’ চ্যানেলে প্রকাশিত গানটির ভিউ ইতিমধ্যে ৫ কোটির বেশি ছুঁয়েছে।
বাংলা চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে ‘হৃদয়ের কথা’ শুধু একটি সিনেমা নয়, বরং এক প্রজন্মের আবেগ—আর ‘ভালোবাসবো বাসবোরে বন্ধু’ এখনো সেই আবেগকে জাগিয়ে রাখে।