সন্ধ্যা নামতেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভেসে আসছিল একের পর এক গান ‘সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে’, ‘তিন পাগলে হলো মেলা’, ‘আছে যার মনের মানুষ মনে তোলা’, ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’। রাত সাড়ে ১২টার পরও থামেনি গানের ধারা। তখন মঞ্চে লালন ব্যান্ড গাইছিল ‘এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে’। উদ্যানে তখনো অগণিত প্রাণের সরব উপস্থিতি। বাতাসে মিশে ছিল ভাব আর সুরের অনুরণন। কেউ চোখ বুজে গানের তালে দুলছিলেন, কেউবা হাততালি দিচ্ছিলেন। ব্যস্ত নাগরিক জীবনে এমন দারুণ এক রাত যেন হয়ে উঠেছিল ভাব, সুর ও মিলনের উৎসব।
জাতীয় পর্যায়ে লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে গতকাল শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয় লালন উৎসব ও লালন মেলা। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই জমে ওঠে আয়োজন। লালনের গানে মুখর হয়ে ওঠে উদ্যানের বড় অংশ। শত শত লালনভক্ত ও অনুরাগীর পদচারণে মুখর ছিল চারপাশ। মঞ্চের শিল্পীদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে গেয়েছেন দর্শকেরা। সেই গানে মিশে ছিল ভক্তির আবেশ, ভালোবাসার উচ্ছ্বাস আর একাত্মতার সুর। লালনের ভাব ও দর্শনের সুরে শুরু হলেও আয়োজনে বাজে লোকসংগীত, আধুনিক ও বাউল ঘরানার নানান গান।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত এই উৎসবের উদ্বোধনী অংশেই ছিল গানে গানে লালনের দর্শন ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা। বিকেল ৫টা ৫৫ মিনিটে লালন সাঁইয়ের জীবন, ভাব ও দর্শন নিয়ে নির্মিত একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে শুরু হয় সংগীতানুষ্ঠান।
লালন শুধু সংগীত সাধক নন; তিনি দার্শনিক, ভাবগুরু। তাঁর গান আজও মানুষকে ভাবায়, এক করে। উৎসবে সেই চেতনার প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে পড়েছিল শিল্পীদের কণ্ঠে, দর্শকদের প্রতিক্রিয়ায়।
রাত সাড়ে ১১টায় মঞ্চে ওঠে ‘ইমন অ্যান্ড বেঙ্গল সিম্ফনি’। তাঁদের সঙ্গে জনপ্রিয় গান ‘সাদা সাদা কালা কালা’ ধরেন গায়ক শিবলু। তখনো উদ্যানভরা দর্শকে—অনেকে গলা মেলান গানের সঙ্গে। গিটারে ইমন চৌধুরী ও মিথুন চক্রের বাদনের তালে তালে টুনটুন বাউলের কণ্ঠে বাজে ‘মন তুই করলি রে কী ইতরপনা’ ও ‘বলো স্বরূপ কোথায় আমার সাধের পেয়ারি’। রাতের আবহে যেন আরও প্রাণ পায় সুরের জোয়ার।